২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকত ও হোটেল মোটেল উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি

-

পর্যটন শহর কক্সবাজারে লকডাউন উঠে গেলেও পর্যটন শিল্পে রয়ে গেছে নিষেধাজ্ঞা। এই অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়া এই শিল্পকে পুনরায় চাঙ্গা করে তুলতে সীমিত আকারে হলেও হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট খোলা রাখা ও সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন হোটেল মোটেল জোনের ব্যবসায়ীরা।
জীবন-জীবিকার তাগিদে বিষয়টি বিবেচনার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুবীর চৌধুরী বাদল ও সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম।
তারা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে কক্সবাজারে সব ধরনের আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়। ১০০ দিন অতিবাহিত হলেও আমরা সরকারি ও বেসরকারি কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। আমরা প্রচণ্ড আর্থিক অসুবিধার মধ্যে থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছি। শুধু আমরা নই, কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত সকলের অবস্থা খুবই শোচনীয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে মারাত্মক কষ্টে রয়েছে। ইতোমধ্যে সীমিত আকারে পরিবহন, দোকান ও মার্কেট, ব্যাংক, কলকারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তি বিকাশের জন্য ভ্রমণের প্রয়োজন। সারা দেশে হোটেল ও রেস্তোরাঁ খুলে দিলেও কক্সবাজারে এখনো বন্ধ রয়েছে। আরো কিছু দিন বন্ধ রাখা হলে আমাদের পরিবারপরিজন নিয়ে বেঁচে থাকায় দুরূহ হয়ে পড়বে। এসব বিবেচনায় পর্যটন শহরের আবাসিক হোটেল ও সমুদ্রসৈকত উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
তাদের আবেদন সীমিত আকারে কক্সবাজারে আবাসিক ও রেস্তোরাঁ খোলা রাখা অনুমোদন ও সরকারি নির্দেশনার নিয়ম মেনে সমুদ্রসৈকত উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।
গত ৫ জুন কক্সবাজার পৌর এলাকাকে রেডজোনভুক্ত করে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের স্বাক্ষরে জারিকৃত নির্দেশনার আলোকে ৩০ লকডাউন ছিল। এর মধ্যে রোববার ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে দু’দিন কাঁচাবাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সংগ্রহের জন্য খোলা রাখা হলেও অন্যসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এদিকে সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সৈকতে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে টহল জোরদারসহ মাইকিং করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কলাতলি ও সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক রুবেল মিয়া বলেন, পর্যটক কিংবা স্থানীয় দর্শনার্থীদের সৈকতে প্রবেশের ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই কাউকে সৈকতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সৈকতে ১০টি পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ টহল জোরদারসহ মাইকিং করে যাচ্ছে। যাতে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কেউ যাতে সৈকতে প্রবেশ না করে।
শহরে পাঁচ হাজারের অধিক দোকানপাটে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মচারী রয়েছে। সাড়ে চার শতাধিক আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজে রয়েছে ২০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। যাদের সবার জীবনে লকডাউনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বাসা ভাড়া, দোকান ভাড়া, বেতন-সম্মানী দিতে না পেরে ইতোমধ্যে অনেক কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন নগরীর অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শ্রমিক-কর্মচারী শূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী আবাসিক হোটেল ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। অনেকে আবার ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বড় বড় আবাসিক প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। ফলে করোনার কঠিন সময়ে সরকারি নির্দেশ মেনে এসব আবাসিক হোটেল এবং রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সবচেয়ে বেশি দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী স্বপ্ন বিলাস, টাইড ওয়াটার, গ্রিন প্যারাডাইস হোটেলের মালিক মো: শহিদুল হক জানান, আমরা ব্যাংক থেকে চড়ামূল্যে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে আসছি। গত বছর ভালো ব্যবসা হয়েছিল কিন্তু গত মার্চ থেকে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম কষ্টে আছি। এখনো অনেক হোটেলের ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন সব বকেয়া আছে। প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু আজ আমাদের কঠিন আর্থিক সমস্যায় সরকারকে পাশে পাচ্ছি না। আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও যেন সরকার কোনো ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করে।
কলাতলির আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ি সি হোমের নুরুল ইসলাম নয়ন, রাজিউনের ছালামত উল্লাহ ও হাইপেরিয়নের জয়নাল আবেদীন বলেন ১৭ মার্চের পর থেকে সরকারি নির্দেশে আবাসিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি কিন্তু পেটেতো কিছু দিতে হবে। তিন মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধের কারণে আমরা খেয়ে-না-খেয়ে কোনোমতে জীবন চালিয়ে আসছি। কিন্তু এখন দেনাদারের চাপ, বিদ্যুৎ বিল, হোটেল মালিকদের ভাড়ার টাকার জন্য চাপÑ আমরা কোন দিকে যাবো। সরকার যেন আমাদের চরম আর্থিক সঙ্কটে পাশে থাকে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক হোটেল মোটেল মালিকদের জন্য কোনো বরাদ্দ আসলে তাদের সাথে বৈঠক করে তা যথাযথভাবে বিতরণ করা হবে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের প্রণোদনা পাওয়া যায়নি। তবে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন প্রশ্নই আসে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

 


আরো সংবাদ



premium cement