৮ মিনিটের ভিডিও মামলার নাটকীয় মোড়
- বরিশাল ব্যুরো
- ০২ জুলাই ২০২০, ০০:০০
বরিশালের হিজলা উপজেলার টেকেরবাজার এলাকায় নিজগৃহে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূ ইসরাত জাহান ইমা হত্যা মামলা ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধূ ইমার ৮ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও জবানবন্দী যেন ফাঁস করে দিলো ঘটনার আসল রহস্য। এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে শুরু হয় বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা। ইমার স্বামী মহসিন রেজার পরিবারের দাবি, ইমার বাবার মাধ্যমে বিনিয়োগ করা প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতেই দাফনের এত দিন পরে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ইমার বাবা সফিকুল ইসলাম মাসুম।
তা ছাড়া ওই ভিডিওতে ইমা নিজেই বর্ণনা দেন, শরীরে আগুন লাগার কারণ। ইমা দাবি করেন, তিনি রান্নাঘরে কাজ করতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তার শরীরে আগুন লেগেছে। প্রথমে ওড়নায় ও পরে শরীরে আগুন ধরে যায়। তাকে বাঁচাতে তার স্বামীর আর্তচিৎকারের কথাও বলেন। স্বামীর সাথে তার মধুর সম্পর্কের কথাও বলেন ইমা। ইমার বাবা তার স্বামীকে ফাঁসাতে পারেন এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন ইমা নিজেই।
এ দিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার অন্যতম সাক্ষী খোকন মুন্সি বলেন, ‘মহসিন-ইমা থাকে তিনতলায়। আমরা থাকি একই ভবনের দোতলায়। বিকেলে হঠাৎ মহসিনের আর্তচিৎকার শুনে আমি তিনতলায় যাই। সেখানে রান্নাঘরের পাশে অগ্নিদগ্ধ ইমাকে দেখে আমি বাথরুম থেকে পানি এনে তার গায়ে পানি ঢালি। মহসিনও তাকে বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপ ও ডাকচিৎকার দিচ্ছিল। পরে গুরুতর ইমাকে অটোতে হাসপাতালে নিয়ে যায় মহসিন ও তার স্বজনরা।’
মহসিনের পরিবার জানায়, মূলত ইমার মামা আরিফের ইটের ভাটা ‘বিবিসি ব্রিকস’ এ ব্যবসার জন্য ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে মহসিন রেজা। তা ছাড়া ইমার বাবার মাধ্যমে অন্য একটি জায়গায় আরো প্রায় ১৭ লাখ টাকাসহ মোট ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। এই টাকা আত্মসাতের জন্যই দাফনের এক সপ্তাহ পরে বুদ্ধি করে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছে ইমার বাবা মাসুম।
মহসিনের পারিবারিক সূত্র আরো জানায়, এটি একটি দুর্ঘটনা; যা মহসিন ও ইমার বাবার পরিবার জানে। ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমার মৃত্যুর পর ইমার বাবা সফিকুল ইসলাম মাসুম নিজেই বিষয়টিকে দুর্ঘটনা উল্লেখ করে এতে তার কোনো অভিযোগ নেই জানিয়ে ডিএমপির শাহবাগ থানায় আবেদন করেন। এরপর ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন ও দোয়া মুনাজাতের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। স্বামী মহসিন রেজা ও তার পরিবার এবং ইমার বাবার পরিবার মিলেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে। অথচ দাফনের প্রায় এক সপ্তাহ পরে এটিকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে মামলা করা হয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এ কথার সত্যতা পাওয়া যাবে বলে দাবি মহসিনের পরিবারের।
মামলার বাদি সফিকুল ইসলাম মাসুম জানান, ‘মামলার কী অবস্থা তা আমি বলতে পারব না। কারণ আমি মামলা-মোকদ্দমা তেমন একটা বুঝি না, এসব পরিচালনা করেন আমার ভাই।’
এ দিকে মামলা দায়েরের পর গত সোমাবার কবর থেকে ইমার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার দাফন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ মামলা তদন্তের অগ্রভাগে কাজ করছেন জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুর রহমান।
গত ১১ জুন ইসরাত জাহান ইমা তার স্বামীর বাড়িতে রান্না করার সময় তার শরীরে আগুন লেগে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে ১৮ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমার মৃত্যু হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা