২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চরম ঝুঁকিতে পথশিশুরা

করোনাভাইরাস কী তাদের জানা নেই
-

রাজধানীর মিরহাজীরবাগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা কুড়িয়ে রাস্তায় রাখা ভ্যানে তুলছিল দশ ও আট বছরের রিপন এবং সুমন। করোনার ঝুঁকির মধ্যেও বাবার কাজে সহায়তা করছিল শিশু দু’টি। সায়েদাবাদ রেললাইনে বসে আপনমনে খেলছিল শিশু সাদ্দাম, রিমন, কাজলসহ আরো কয়েক শিশু। করোনাভাইরাস কী, তাদের জানা নেই।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সব মানুষ যখন ঘরে, তখন ঘরহীন শিশুরা দলবেঁধে ঘুরছে, খেলছে। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালসহ রাস্তার ধারের কোনো ভবনের নিচে জটলা করছে তারা। আবার ছিন্নমূল শিশুরা পাশাপাশি ঘুমাচ্ছে। অথচ এদেরই কেউ যে করোনাভাইরাস বহন করছে এবং রয়েছে মৃত্যুর চরম ঝুঁকিতে তা তাদের জানা নেই।
শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, শিশুরা নিজেরা যেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে তেমনি তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি ছুটি শেষে এখন থেকে সারা দেশে অবাধ চলাচল শুরু হচ্ছে। এ সুযোগে ছিন্নমূল বা পথশিশুরাও এখন অবাধে ঘুরে বেড়াবে। এতে তারা আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
রাজধানীর কমলাপুরসহ বিভিন্ন রেলস্টেশন, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থানে পথশিশুদের জটলা করে খেলতে কিংবা আড্ডা দিতে দেখা গেছে। বাস, লঞ্চ বা বাসস্ট্যান্ডে তারা কাগজ কুড়িয়ে কিংবা যাত্রীদের লাগেজ বহন করে যা আয় করে তা দিয়েই তাদের জীবিকা চলে। তবে সবকিছু বন্ধ বলে নিয়মিত খাবার জুটছে না তাদের।
সায়েদাবাদ টার্মিনালে পথশিশু শহিদ কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন কোনো কাজ নেই, তাই সে অন্য শিশুদের সাথে রেললাইনে খেলছিল। করোনাভাইরাস কী তা শিশুটির জানা নেই। তার উক্তি, শুনছি কী একটা রোগে সবকিছু বন্ধ। তার মতো অন্য শিশুদেরও একই কথা। কোনো কাজ নেই, তাই তারা রেললাইনে ঘুরে বেড়ায় বলে জানাল।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব শিশুর সঙ্ঘবদ্ধ চলাফেরা ও রাতযাপনের কারণে করোনাভাইরাসের বাহক হিসেবে খুব ঝুঁকির মধ্যে আছে এরা। সংক্রমণ ঠেকাতে এ পথশিশুদের নিরাপদ স্থানে রাখার পরামর্শ তাদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক এক কর্মকর্তার মতে, করোনা মহামারীতে সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ছিন্নমূল মানুষ। তারা গাদাগাদি করে অনেকে একসাথে থাকে। বিশেষ করে শিশুরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। এ ছাড়া বস্তির রাস্তাগুলো অনেক সরু হওয়ায় একজন অপরজনের শরীরের সংস্পর্শে আসতেই হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণের অব্যবস্থাপনাও অসহায় মানুষদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হচ্ছে। স্বল্প আয়ের এসব মানুষ ত্রাণের আশায় বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসছে। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে তারা মৃত্যুঝুঁকি নিচ্ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিশুদের সংক্রমণের হার কম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা পথশিশুরা ভাইরাসটির বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। কেননা এ সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। ফলে এদের মাধ্যমে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে। নিজেদের কমিউনিটিতে এরা ঝুঁকি তৈরি করবে। এরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে, রাতের বেলা একসাথে থাকে। সরকারের বাজেটে পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম আছে। অন্তত মেগা সিটিগুলোতে যে শিশুরা আছে তাদের জন্য করোনায় বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক। পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন ও এনজিওগুলোর সাথে সমন্বয় করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। জিলানী মিলটন


আরো সংবাদ



premium cement