২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তামাকে রাজস্ব আদায়ের চেয়ে চিকিৎসা ব্যয় ৫০ গুণ বেশি

-

তামাক থেকে বছরে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তার চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ্েক লাখ ৬২ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। আর পঙ্গুত্ববরণ করে তিন লাখ ৮২ হাজার মানুষ। এসব ক্ষেত্রে রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও তামাক থেকে রাজস্ব আসে মাত্র দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল তাদের গবেষণায় জানায়, বাংলাদেশের তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় তামাকজনিত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিও বেড়েছে। দেশে প্রতি বছরে প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে মারা যায় এবং তিন লাখ ৮২ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে। এর মধ্যে ৭০টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তামাকজনিত ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে অনেক বেশি রাজস্ব দেয়ার কথা সব সময় বলে এলেও এর থেকে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তা রাজস্বের তুলনায় অনেক বেশি।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহারের কারণে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) বলছে, তামাকের কারণে অসুখ হওয়ার জন্য সরকারের স্বাস্থ্যসেবা এবং তার আলোকে যত অ্যালোকেশন হয় সেই খরচটা অনেক বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাক সেবনের কারণে ১২ লাখ মানুষ আটটি প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে তিন লাখ ৮২ হাজার মানুষ অকাল পঙ্গুত্বের শিকার হয়, আর তামাকজনিত রোগে ভোগে ১২ লাখ মানুষ। এ ছাড়া ট্যোবাকো অ্যাটলাস শিরোনামের আন্তর্জাতিক এক প্রকাশনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক ব্যবহারকে অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ। আর তারা অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে তামাক ব্যবহারকে চিহ্নিত করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির জরিপ বলছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় বছরে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা রাজস্ব আয়ের চেয়ে চিকিৎসার আর্থিক ক্ষতি অনেক বেশি। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬২ হাজার মানুষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে মারা যায় এবং তিন লাখ ৮২ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে বলে জানিয়েছে টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে। তাদের মতে, ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও কাশিজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণা পর্যালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এ ছাড়াও গবেষণা দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ধূমপায়ীর মৃত্যুঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাকপণ্য উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ চেয়ে এর বাস্তবায়নে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চায়। এতে বলা হয়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তামাক কোম্পানিকে দেয়া অনুমতি প্রত্যাহারসহ সব তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বিড়ি-সিগারেট উৎপাদন-বিক্রি বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে তামাক শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য সতর্কতা জেনেই থধূমপায়ীরা ধূমপান করেন। সাময়িকভাবে এই শিল্প বন্ধ করে তাদের ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। বরং উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে এবং আমদানি করা সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের মাধ্যমে দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় হারাবে।


আরো সংবাদ



premium cement