২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভৌতিক বিলে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া অসহায়

গ্রাহক অসন্তোষ দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ
-

বিদ্যুতের ভৌতিক বিলে অসহায় হয়ে পড়েছেন রাজধানীর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ারা। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিল দেয়া হচ্ছে। আবার বিল পরিশোধ না করলে লাইন কেটে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। একেতো করোনার কারণে ভাড়াটিয়াদের আয় কমে যাওয়ায় বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে পারছেন না ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে। এর ওপর ভৌতিক বিলের চাপে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন রাজধানীবাসী। এমতাবস্থায় বিদ্যুৎবিল নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
রাজধানীর একাংশের বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এমডি বিকাশ দেওয়ান জানিয়েছেন, করোনার কারণে অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেনি। ফলে তারা মিটার রিডিং না করেই গড় বিল দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের ভুল হয়ে গেছে। তিনি কোনো গ্রাহকের এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে কাছের বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিল সংশোধনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আর কেউ বিল দিয়ে দিলে পরের মাসের সাথে তা আপনা আপানিই সমন্বয় হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দুশ্চিন্তা না করতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
শ্যামলীর বাসিন্দা আতিক রহমান জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি ৭ তলা বাড়ি করেছিলেন শ্যামলীর আদাবরে। ১২টি ভাড়াটিয়ার মধ্যে ১০টি ভাড়াটিয়াই গত দুই মাস ধরে নিয়মিত বাসায় থাকেন না। মার্চে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই তাদের পরিবারের অন্য লোকজনকে তারা গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে নিয়মিত বাসায় থাকেন না ভাড়াটিয়ারা। এতে ভাড়াও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগই বাসাভাড়া দেননি। কিন্তু বাসা ভাড়া না দিলেও ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
এমনি পরিস্থিতিতে গত দুই মাসের বিদ্যুৎবিল একসাথে এসেছে। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বিল এসেছে। যেমন একজন ভাড়াটিয়ার মাসে বিল যেখানে ৬ শ’ টাকা থেকে ৮ শ’ টাকা আসত, সেখানে বিল এসেছে দেড় হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ ভাড়াটিয়াই বাসা ছেড়ে বাড়ি চলে গেছেন। বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলেও বিল বেশি এসেছে। এক দিকে, ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধের চাপ, অপর দিকে বিদ্যুতের ভৌতিক বিল, আবার অন্য দিকে বাড়িভাড়া না পাওয়া এ যেন ত্রিমুখী চাপে পড়ে গেছেন তারা।
গত মার্চ মাসের শেষ দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরওপর করোনাভাইরাসের কারণে অনেক বাড়ি লকডাউন করা হয়। এ কারণে বিদ্যুতের মিটার রিডাররা বিভিন্ন বাড়িতে যেতে পারেননি। আবার অনেক মিটাররিডার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথবা বাড়ির কেউ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় হোমকোয়ারেন্টিনের মুখে পড়েছেন। সব মিলে মার্চ মাসের বিল ও এপ্রিল মাসের বিল এক সাথে মে মাসে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মিটার রিডিং করেই গড় বিল দেয়া হয়েছে। এভাবে কোনো কোনো এলাকায় স্বাভাবিক বিলের চেয়ে বেশি বিল এসেছে।
জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাসায় গত দুই মাসে লোকজন নেই। বিদ্যুতের ব্যবহারও তেমন নেই। দুই মাস পর এসব বাসায় বকেয়া বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যেখানে বিদ্যুৎ ব্যবহারই হয়নি, এমন অনেক বাসাতেও বিল দেয়া হয়েছে গত ৩-৪ মাস আগের মতো স্বাভাবিক হিসেবেই। গ্রাহকদের প্রশ্ন, ভুতুড়ে বিল কী করে হলো। একই সাথে বিদ্যুৎ অফিস থেকে গত মাসে বিলের কপি দেয়া হয়নি। এখন দুই মাসের একসাথে বিল এবং গত মাসের বিল পরিশোধ না করায় জরিমানাও যোগ করা হয়েছে। বিদ্যুৎবিল পরিশোধ না করায় অনেক এলাকায় ঈদের আগে মাইকিং করা হচ্ছে বিদ্যুৎবিল পরিশোধের জন্য। এতে অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন কখন যেন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির এমডি বিকাশ দেওয়ান জানিয়েছেন, গত দুই মাসে তারা কোনো বিলের অর্থই পাননি। এতে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সঙ্কটে পড়ে গেছে। এরওপর কোনো গ্রাহকের বিল বেশি বকেয়া হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বেশি বকেয়া পরিশোধে অসুবিধা হবে। এ কারণেই বিভিন্ন জায়গায় গ্রাহকের বিদ্যুৎবিল পরিশোধের তাগিদ দিতে সতর্ক করা হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয়নি।
এ দিকে রাজধানীতে বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলের অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি সব বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর প্রধানদের উদ্দেশে বলেছেন, বিদ্যুৎবিল নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ দ্রুত নিষ্পত্তি করুন। তাদের জানানো উচিত ছিল যে, কেন গড় বিল দেয়া হচ্ছে; পরবর্তীতে কিভাবে তা সমন্বয় হবে। গ্রাহকদের সাথে আস্থার সম্পর্ক স্থাপন করে কল সেন্টারগুলো অধিকতর গ্রাহকবান্ধব করুন। তিনি ওই দিন এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ডিপিডিসি, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো), নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) ও পাওয়ার সেলের সাথে চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে পর্যালোচনা সভায় এসব কথা বলেন।


আরো সংবাদ



premium cement