২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এত পানি ১০০ বছরেও দেখেনি পিরোজপুরবাসী

-

রাত তখন ১০টা। বিদ্যুহীন শহরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাথার ওপরে প্রবল বাতাসের গর্জন। আর নদী ছাপিয়ে রাস্তায় উঠে গেছে পানি। বলেশ্বর নদী তীরের মানুষের হাঁকডাক বাড়তে থাকে। পানি কত দূর, এমন ধ্বনি কানে আসে থেমে থেমে। কেউ ছুটে যায় আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউবা পাশের বাসার উঁচু জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। ফুলে উঠা পানি আর ঝড়ের তাণ্ডবে ভীতিকর এক রাত এভাবেই কাটিয়েছে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরবাসী। আমফানের প্রতাপে প্লাবিত হয়েছে পিরোজপুরের বহু এলাকা। এত পানি আগে দেখেনি অনেকেই।
শহরের খুমুরিয়া এলাকায় ৪০ বছর ধরে বাস করেন স্কুলশিক্ষিকা সোহেলী শুভ্রা। তিনি বলেন, এত পানি কোনো দিন দেখিনি। সিডরেও বাসার সামনে এত পানি আসেনি। শহরের বাসিন্দা মামুন জানান, দোতলা একটি বাসার নিচ তলায় থাকি। আর চার আঙুল পানি হলেই বাসার ভেতরে চলে আসত পানি। সদর উপজেলার কলাখালি ইউনিয়নের এক বাসিন্দা জানান, গত ১০০ বছরেও এমন পানি কেউ দেখেনি। তবে পানির এই স্থায়িত্ব খুব বেশি সময় ছিল না। রাত শেষে ভোর হওয়ার সাথে সাথেই ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করে। সকালেই লোকালয় থেকে অধিকাংশ জায়গায় পানি নেমে যায়।
স্থানীয় নানা সূত্রের খবর অনুযায়ী, পিরোজপুরে ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও জোয়ারের পানিতে কাঁচা ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর বাতাসের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। পানির উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেশি হওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। জেলার শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে পিরোজপুরের নদ-নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। সকালে জোয়ারের পানির চাপে মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চরের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলের ক্ষেত প্লাবিত হয়। সন্ধ্যায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়।
রাত ৯টার দিকে প্রবল বাতাসে জোয়ারের পানিতে মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে গ্রামের শতাধিক কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জোয়েরের পানি পাকা সড়ক উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় বেশ কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিকে বাতাসের তোড়ে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে গেছে এবং কিছু গাছ ঘরের ওপর পড়ায় সেগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের রাজা মিয়া বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর বাতাস ও জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। রাত ৯টার পর থেকে খেতাছিড়া গ্রামের পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে তার বাড়ি চার থেকে পাঁচ ফুট পানিতে ডুবে যায়।
পিরোজপুর সদর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের হাসিব খান বলেন, বাতাসে আমাদের ঘরের চালের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। গ্রামের অনেক কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে গেছে।
ইন্দুরকানি উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মহসিন উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, রবি শস্যের খেত, আউশের বীজতলা ও কলাবাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঊর্মি ভৌমিক গতকাল বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচাঘর, রবিশস্য, সড়ক ও বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া, খেতাছিড়া, কচুবাড়িয়া, মিরুখালী ও রাজারহাটে বেড়িবাঁধ ও বাঁধের ঢালের কিছু ক্ষতি হয়েছে। খেতাছিড়া গ্রামে ৩৬ থেকে ৪০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। পিরোজপুর জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement