২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শেবামেকে করোনা পরীক্ষার জনবল নেই

বরিশালে ভয়ে চিকিৎসকের চাকরি ছাড়ার আবেদন!

-

করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য সম্প্রতি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের (শেবামেক) ভাইরোলজি বিভাগে একটি অত্যাধুনিক পলিমারেজ চেইন রি-অ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন সংযোজন করা হয়েছে। তবে ভাইরোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রায় পাঁচ বছর পর বিভাগটির কার্যক্রম চালুর জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার পিসিআর মেশিন সরবরাহ হলেও ব্যবস্থা করা হয়নি চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান বা প্রয়োজনীয় জনবলের।
তাই বিভাগটির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগকে। এ জন্য কপাভনভ পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এ বিভাগের চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ী কর্মচারীদের মধ্যে।
আর সেই আতঙ্কে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আবেদন লপাছেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: এম টি জাহাঙ্গীর হুসাইন। গত ৩০ মার্চ পিসিআর মেশিনটি শেবামেকে পৌঁছাবার পরপরই তিনি চাকরি থেকে অবসরকালীন ছুটিতে (এলপিআর) যেতে লিখিত আবেদন করেন। তবে চলমান করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার স্বার্থে তার ওই আবেদনটি গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে একই আদেশে শেবামেকসহ দেশের অঅটটি মেডিক্যাল কলেজে বিভিন্ন ভাইরাস পরীক্ষার জন্য ভাইরোলজি বিভাগ স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিভাগটি সংস্থাপনের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি শেবামেকের ভাইরোলজি বিভাগের পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যক্রম। নামে বিভাগ থাকলেও প্রস্তুত করা হয়নি নির্দিষ্ট কোনো কক্ষও। এমনকি বিভাগটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কার্যক্রম চালুর জন্য জোরালোভাবে উদ্যোগীও হয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ভাইরোলজি বিভাগের কার্যক্রম শুরু করতে তোড়জোড় শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনকি ঢাকা সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর থেকে গত ৩০ মার্চ করোনাভাইরাস পরীক্ষার অত্যাধুনিক পিসিআর মেশিন সরবরাহ করা হয় শেবামেকে। কিন্তু বিভাগটিতে কোনো জনবলের ব্যবস্থা করা হয়নি। একটি মাত্র সহকারী অধ্যাপকের পদ থাকলেও তা শুরু থেকেই শূন্য। নেই টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় জনবল। জনবল না থাকায় আপাতত মাইক্রোবায়োলজি বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু জন্য। কিন্তু অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এ বিভাগটির দায়িত্ব নিতে নারাজ মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: এমটি জাহাঙ্গীর হুসাইন। শুরু থেকেই তিনি এ নিয়ে বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসেনি। এ জন্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষায় স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণের আবেদন করেছেন তিনি।
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: আকবর কবির বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব ভাইরোলজি বিভাগে কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য। গণপূর্ত বিভাগ কক্ষটি বুঝিয়ে দিলেই সেখানে পরীক্ষার কাজ শুরু হবে। সে জন্য আমরা প্রস্তুতিও নিয়েছি। তবে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধানের স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন সম্পর্কে তার জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
তবে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: এম টি জাহাঙ্গীর হুসাইন স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার চাকরির মেয়াদ আছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কারণে পরিবারের চাপের কারণে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন করেছি। কিন্তু মাইক্রোবায়োলজি বিভাগেও জনবল নেই। আমি এবং অপর একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। আমি অবসরে গেলে এ মুহূর্তে তিনি একা ভয় পেতে পারেন বলেই পরে আবার সিদ্ধান্ত পাল্টেছি। কর্তৃপক্ষও এই পরিস্থিতিতে আবেদনটি গ্রহণ করেননি।
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধানের স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন দাবি করে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: অসিত ভূষণ দাস বলেন, অবসরে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আর ডা: এম টি জাহাঙ্গীর হুসাইন এলপিআরের আবেদন করেছেন কি না তা-ও আমার জানা নেই। তবে ভাইরোলজি বিভাগে চিকিৎসক এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement