১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফ্যাশন হাউজগুলোর ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকা

করোনায় বৈশাখী উৎসব স্থগিত
-

বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে প্রতিবছরই বাহারি রঙিন পোশাক আর নানা পণ্যের বেচাকেনায় চলে রমরমা ব্যবসায়-বাণিজ্য। কিন্তু করোনাভাইরাসের থাবায় এবার সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বৈশাখী অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এ বছর নববর্ষ উপলক্ষে ব্যবসায় করার সুযোগ নেই। তাই করোনার আঘাত সরাসরি পড়েছে বৈশাখের বাণিজ্যে। এতে শুধু দেশীয় পোশাক খাতে দুই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশে বছরের দুটি বড় উৎসব ঈদ ও পয়লা বৈশাখ। এ সময়ে পোশাকের কেনাবেচা জমে ওঠে। ফলে সারা বছরই এ দুটি উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে বিভিন্ন প্রস্তুতি। তৈরি করা হয় রঙ বেরঙের নতুন নতুন ডিজাইনের নানা পোশাক। যার প্রস্তুতি এবারও প্রায় শেষ। বেচাকেনার জন্য চলছিল নানা আয়োজন। এ মুহূর্তে এসে করোনাভাইরাসের আঘাতে সব বন্ধ হয়ে গেছে। বৈশাখী বাণিজ্য এবার শেষ। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে পয়লা বৈশাখের পর ঈদ বাণিজ্যেও বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন দেশীয় ফ্যাশন উদ্যোক্তারা। তাই ব্যবসায়-বাণিজ্যের এ নাজুক পরিস্থিতিতে শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ঠিক রাখতে সরকারের কাছে সহায়তা হিসেবে বিশেষ তহবিল চান খাত সংশ্লিষ্টরা।
দেশীয় সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব পয়লা বৈশাখের সব আয়োজন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের ঘরে অবস্থান, শপিংমল বন্ধ এবং পয়লা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান বাতিলের কারণে বৈশাখ ঘিরে তারা এ বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
দেশের নামীদামি ব্র্যান্ডের দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর মধ্যে রয়েছে সাদাকালো, আড়ং, কে ক্রাফট, অঞ্জনস, নিপুণ, প্রবর্তনা, রঙ, অন্যমেলা, বাংলার মেলা, ওজি, নবরূপা, গ্রামীণ চেক, নগরদোলা, দেশাল, নীলাঞ্জনাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব ব্র্যান্ড ঈদ ও বৈশাখে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করে নিজস্ব শোরুমেই বিক্রি করে। এ ছাড়া দেশীয় আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছোট বড় এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ লোক সরাসরি কাজ করে। পরোক্ষভাবে যুক্ত লোকজনের হিসাব করলে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। করোনার প্রভাবে এ খাত সংশ্লিষ্ট সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন থাকলে কাজ হারাবে শ্রমিকরা। পথে বসবে অনেক ব্যবসায়ী।
দেশীয় ফ্যাশন হাউজ মালিকদের সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নেতারা জানান, করোনা প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে মানুষকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুই দিন আগে পয়লা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ফলে চলতি বছর বা বাংলা নববর্ষে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর বৈশাখী কেনাকাটা বন্ধ থাকবে। সরকার ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। সেই সাথে সারা দেশের দোকানপাট ও বিপণিবিতান (শপিং মল) ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ফলে করোনার কারণে বৈশাখে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে দেশী পোশাকশিল্প। বৈশাখী বিক্রি বন্ধ হওয়ায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলেও দাবি করেন তারা।
সংগঠনটির সভাপতি মো: শাহীন আহম্মেদ জানান, করোনার কারণে মার্চের শুরুর দিকে বেচাবিক্রি কমে যায়। ইতোমধ্যে তাদের প্রায় ১২৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আর মার্চের শেষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার ফলে বৈশাখী বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে দেশীয় পোশাকশিল্প প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
তিনি জানান, বৈশাখী বিক্রি না হওয়ায় দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর কর্মীদের আগামী তিন মাসের বেতন-ভাতা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। একই সাথে প্রান্তিক কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীদের কাজের মজুরি বাবদ বকেয়া প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পরিশোধেও হিমশিম খাবে প্রতিষ্ঠানগুলো, এমন দাবি করেছেন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ফ্যাশন উদ্যোগ) সভাপতি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশীয় পোশাকশিল্পে যুক্ত প্রান্তিক কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীদের কাজের মজুরি এবং ফ্যাশন হাউজের কর্মীদের বেতন পরিশোধে সরকারের কাছে বিনা সুদে ১ বছরের জন্য ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দাবি করেছে ফ্যাশন উদ্যোগ। সংগঠনটি বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে ঈদের ব্যবসায়ও হারাবে দেশীয় পোশাকশিল্প। ফলে সরকারের যথাযথ উদ্যোগই কেবল শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
এ বিষয়ে দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ড সাদাকালোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফইএবি) সাবেক সভাপতি আজহারুল হক আজাদ বলেন, আমাদের এ খাতের দুটি অংশ। একটি বিভিন্ন কারখানা বা ব্যাকওয়ার্ড লিংকের মাধ্যমে প্রোডাকশন বা পণ্য তৈরি এবং অন্যটি সেল বা বিক্রি করা। এখন বিক্রি যদি বন্ধ থাকে তাহলে প্রোডাকশন অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বছরে বড় উৎসব ঈদ ও পয়লা বৈশাখ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা সারা বছরের লক্ষ্য ঠিক করি। এবার পয়লা বৈশাখ উদযাপন হচ্ছে না। বৈশাখের সব প্রস্তুতি আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। ফলে এবার শুধু বৈশাখেই দেশীয় পোশাক খাতের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে যাচ্ছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড আড়ংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, করোনাভাইরাস শুধু দেশের নয় এটা বৈশ্বিক সমস্যা। এর ফলে পুরো ব্যবসায়-বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আমরা কর্মপন্থা নির্ধারণ করছি। এ জন্য সেফটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈশাখ আমাদের একটি বড় উৎসব। এটা এবার বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ এ উৎসবে আমাদের বিক্রি থাকবে শূন্যের কোটায়। তাই আমরা বার্ষিক বিক্রির যে টার্গেট নিয়েছি সেটা এবার পূরণ হবে না। স্বাভাবিকভাবে ব্যবসায়ও কমে যাবে।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আড়ংয়ের এ কর্মকর্তা জানান, এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের সেফটি বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা। কারণ আগামী ১৫ দিন বা এক মাসে যদি এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে তাহলে এ ক’দিনে যে ক্ষতি হবে এটা হয়তো দু-এক বছরে পুষিয়ে নেয়া যাবে। তবে যদি বর্তমান অবস্থা দীর্ঘমেয়াদি থাকে তাহলে আমাদের জন্য সামনে কঠিন সময় আসবে।
দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ডের উদ্যোক্তারা জানান, দেশে এ খাতে প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে পাঁচ লাখের বেশি লোক সরাসরি কাজ করে। তাঁতি, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজসহ যদি পরোক্ষভাবে ধরা যায় তাহলে এ হিসাব আরো অনেক বেশি। এ খাতের সাথে শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সরাসরি জড়িত। এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। তাই বিশাল সংখ্যক এই কর্মীবাহিনীর খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা জরুরি উল্লেখ করে এফইএবি-এর নেতা বলেন, আমরা এ খাতের সঙ্কট সময়ে সরকারের কাছে ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল চাচ্ছি। যাতে আগামী তিন মাস কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা না হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসবে নেমে শিশুর মৃত্যু ধূমপান করতে নিষেধ করায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বড় বোনের বৌভাতের গিয়ে দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র নিহত কোটালীপাড়ায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত চুয়াডাঙ্গা দর্শনায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানের কবর জিয়ারত করলেন জামায়াত আমির আরব আমিরাতে ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যায় ওমানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বর প্রশাসন ও আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার : গণঅধিকার পরিষদ দুই কুলই হারালেন ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম একদিন পর জবিতে উদযাপন হবে নববর্ষ, বন্ধ থাকবে ক্লাস-পরীক্ষা

সকল