১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের কাছে বিকাশ এখন বিপদের বন্ধু

বিজেএফসিআই’র জরিপ
-

করোনাভাইরাস সতর্কতায় গোটা দেশবাসী যখন ঘরে বন্দী এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির, তখন বিকাশের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলো নি¤œ আয়ের মানুষের কাছে আবির্ভূত হয়েছে বিপদের বন্ধু হিসেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো চার্জ ছাড়াই লেনদেন করার সুযোগ করে দেয়ায় এবং লেনদেনের সীমা বাড়িয়ে দেয়ায় তারা ঘরে বসেই বিকাশের মাধ্যমে কিনতে পারছেন খাদ্যসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
ঢাকা শহরের ৩০০ বাড়ির ওপর পরিচালিত বিজেএফসিআইর এক জরিপে বলা হয়, কোয়ারেন্টিনে থাকা নি¤œ আয়ের লোকজনের খাদ্য মজুদ না থাকায় তাদের প্রতিদিন খাদ্যসামগ্রী কিনতে হয়। তা ছাড়া মহিলা এবং বয়স্ক লোকদের পক্ষে বাজারে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় তারা টেলিফোনে অর্ডার দিয়ে ডেলিভারি সার্ভিসগুলোর মাধ্যমে প্রয়োজন মিটাতে পারছেন এবং তা সম্ভব হচ্ছে বিকাশের মোবাইল লেনদেন সুবিধা থাকার কারণে।
জরিপে আংশগ্রহণকারী শতকরা ৯০ ভাগ বলেছেন, বিকাশের মাধ্যমে সরাসরি টাকা দিয়ে তারা সহজেই বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট ও বাজার থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন। দিতে পারছেন বিভিন্ন সার্ভিসের বকেয়া বিল। ব্যাংকে যাওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব না হওয়ায় বিকাশের মাধমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারছেন।
রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার মিসেস নাজনীন আখতার জানালেন, ‘আমার স্বামী নেই, তাই ঘরের সব কাজ আমাকেই করতে হয়। প্রথম কয়েক দিন বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমার পাশের বাসার মুরুব্বি বিকাশের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা ট্রান্সফার করে সহজ-এর মাধ্যমে অনেক বাজার করলেন ঘরে বসেই। এরপর শুরু করলাম আমি এবং আমার দেখা দেখি আমার ভাই ও বোনদের পরিবার। বিকাশ এ লেনদেন মানে ঝুঁকিহীন লেনদেন এবং ঘরে বসে বাজার করা।
বিকাশ সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ করোনার বিশেষ পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর ২৬ ও ২৭ মার্চ এই দুই দিনে গ্রাহক বিকাশেই এক কোটি ১০ লাখের বেশি লেনদেন করেছেন। কোথাও না গিয়ে ঘরে বসে বিদ্যুৎ, গ্যাসের বিল প্রদান, মোবাইল রিচার্জ, সেন্ডমানি, অ্যাডমানি, পেমেন্টের মতো সেবাগুলো জরুরি এই অবস্থায় গ্রাহকের জন্য বাড়তি সুবিধা বয়ে এনেছে।
গত ২৪ মার্চ এক দিনেই সারা দেশের সব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির প্রায় দেড় লাখ বিদ্যুৎ বিল বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করেছেন গ্রাহকরা।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, অর্থনীতি যখন স্থবির, বিকাশের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলো তখন কিছুটা হলেও বাজার চাঙ্গা রেখেছে। আমাদের এ দিকটায় আরো নজর দিতে হবে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে। ব্যাংক যা করতে পারছে না, বিকাশ তা করতে পারছে অনায়াসে। জনসমাগম এড়িয়ে চলা, ঘরে থাকাসহ নানান কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশবাসী করোনা প্রতিরোধে তৎপর। ডিজিটাল লেনদেন তাদের সেইসব পদক্ষেপ আরো সুবিধাজনক এবং সহজ করেছে। গ্রাহকরা জরুরি পরিস্থিতিতে ডিজিটাল লেনদেনের সুবিধার কারণেই আরো বেশি এই লেনদেনে অভ্যস্ত হচ্ছেন।
বিকাশের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত বিশেষ পরিস্থিতে সাধারণ মানুষ জরুরি লেনদেনে বিকাশের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে আস্থা রাখছেন মূলত ৩টি কারণে। প্রথমত, এই বিশেষ সময়ে আমরা ১০০০ টাকা পর্যন্ত লেনদেনে কোনো ফি নিচ্ছি না। এতে ভাইরাস সংক্রমণের কোনো সুযোগ নেই এবং গ্রাহক যেকোনো সময় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করে তা খরচ করতে পারছেন এবং সর্বোপরি, দেশের বেশির ভাগ সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বিকাশের সাথে আস্থার সাথে কাজ করছে। বিকাশ এই বিশেষ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রতিপালনেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে লেনদেনে কোনো চার্জ নিচ্ছে না বিকাশ এবং মাসিক লেনদেন সীমা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রতিপালনের পাশাপাশি জনস্বার্থে আরো পদক্ষেপ নিয়েছে বিকাশ। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন করোনা পরিস্থিতিতে নানান রকম কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সহায়তা সহজ করতে বিকাশ অ্যাপের সাজেশন বক্সে সরাসরি যুক্ত হয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের লোগো। এখন দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে খুব সহজেই এই প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিক সহায়তা দিতে পারছেন গ্রাহক। তিনি বলেন, নির্দেশনা অনুসারে বিকাশ গ্রাহকরা এই জরুরি সময়ে যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে যেন কাস্টমার সার্ভিস সেবা পান এবং লেনদেন অব্যাহত রাখতে পারেন তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৬২৪৭ নম্বর, বিকাশের ফেসবুক পেজ, লাইভ চ্যাট এবং ইমেইলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement