১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘরে থাকলে ক্ষুধায়, বের হলে করোনায় মৃত্যু তাড়া করে ফিরছে তাদের

খুলনার দুই উপজেলার জীবনচিত্র
-

‘ঘরে থাকলে ক্ষুধায়, বের হলে করোনায়’ মৃত্যু এখন তাড়া করে চলেছে। তাই ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার সন্ধানে বের হতেই হচ্ছে। খুলনার দাকোপে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হওয়া হতদরিদ্র মানুষেরা এমন করেই তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। একবারে একই অবস্থা উপকূলীয় ও সুন্দরবনঘেঁষা অন্য উপজেলা কয়রার মানুষদেরও।
উপকূলীয় জনপদ দাকোপ উপজেলার ৮০ শতাংশ মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। কর্মহীন এ অঞ্চলের একটি বড় অংশ জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে নানা পেশার সাথে জড়িত থাকে। সুন্দরবন পাশের গ্রামগুলোর অনেকে বনে কাজ করে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মজীবী এসব মানুষ কর্মহীন হয়ে ঘর বন্দী থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুই লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দাকোপে এ পর্যন্ত করেনা মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত চাল বিতরণের শেষ পর্যায়ে। কিন্তু দাকোপে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দের পরিমাণ একেবারেই অপ্রতুল। এ যেন সমুদ্রে ঢিল ছোড়ার মতো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি গ্রামে চাহিদার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ এসেছে খাদ্য সহায়তার আওতায়। বাকিরা না পাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খল পরিবেশ। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের এই চাল বিতরণে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এমনকি জনতার চাপ সামলাতে ১০ কেজির স্থলে ৫-৬ কেজি করে দিয়ে অধিকসংখ্যক লোককে সুবিধাভোগীর আওতায় আনার চেষ্টা করছেন তৃনমূলের জনপ্রতিনিধিরা। আবার এ সুযোগে কেউ কেউ অনিয়মের সুযোগ নিচ্ছেন।
দাকোপে উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে ব্যক্তি বা দলীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, শিশুদের জন্য আমরা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রপর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার খবর পাওয়া গেছে। সরকারি সহায়তায় পরিবার প্রতি ১০ কেজি চাল বরাদ্দ থাকছে, এর বাইরে স্থানীয় প্রশাসন আলু ডালের কিছু ব্যবস্থা করে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু পরিবারের অন্যান্য চাহিদা মেটাতে তারা দিশেহারা। উপজেলার সুতারখালী ইউপির নলিয়ান গ্রামের দিনমজুর গফফার ফকির বলেন, এক দিন আয় না করলে সংসার চলে না, এখনো কোনো সহায়তা মেলেনি। করোনার ভয়ে অভুক্ত স্ত্রী-সন্তানের কষ্ট না দেখে বের হয়ে পুলিশের মার খেলেও সহ্য হবে। বাজুয়া চুনকুড়ি গ্রামের শ্রমজীবী মজিদ শেখ, আনছার মোল্যা, বানীশান্তা ইউপির দলিত সম্প্রদায়ের নাপিত পেশার সোহেল বিশ্বাস, সুপ্রভাত গাইন বলেন, ঘরে-বাইরে সব জায়গায় মৃত্যু যেখানে তাড়া করছে, সেখানে জীবন বাঁচাতে রাস্তায় বরে হলে ক্ষতি কী? সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম ফকির জানান, আমার ইউনিয়নে ১০ হাজারের উপরে পরিবার আছে; যার প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ দরিদ্র। এ পর্যন্ত পাওয়া ৭ টন চাল ৭০০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি বাকিদের কিভাবে বাঁচিয়ে রাখব? কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল এবং পানখালীর চেয়ারম্যান শেখ আবদুল কাদের একই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, খাদ্যসহায়তা না বাড়ালে কেবল আইন দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, প্রাপ্তিসাপেক্ষে ৫০ টন ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আমরা ব্যক্তিগত নানাভাবে ব্যবস্থা করে দেয়ার চেষ্টা করছি, তা ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজির ন্যায্য মূল্যের চাল বিক্রি চলছে। তবে বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে পর্যাপ্ত খাদ্যসহায়তা বরাদ্দে উচ্চপর্যায়ে আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কয়রা উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। সেখানকার মানুষের জীবন ধারা ও জীবিকা উপার্জনের উপায়ও পুরোপুরি দাকোপের মতো। সেখানেও চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণ করতে গিয়ে একই রকম সমস্যায় পড়ছেন। কয়রা উপজেলা সদরের আবদুল গণি সরদার ও আবদুস সামাদ সানা দরিদ্র। না খেয়ে দিন যাচ্ছে বলা চলে। তবে সাহায্য পাননি। তারা জানান, চেয়ারম্যান মেম্বার বলেছেন পরের চালানে তারা পাবেন। কিন্তু সরকারি সাহায্য আদতে আর পাওয়া যাবে কি না তা কেউ জানেন না। কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহার সাথে কথা হলে তিনি জানান, সরকারি বরাদ্দের ৫০ টন চাল একটি ইউনিয়ন বাদে সবগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে ৩০০ পরিবারকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে আরো সাহায্য সংগ্রহ ও বিতরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য দিকে কেবল খাদ্য সঙ্কট নয়, কিছুসংখ্যক কৌতূহলী উদাসীন লোক অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছেন। উদ্বেগের আরেকটি কারণ রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে ব্যাপক লোকসমাগম লক্ষ করা যাচ্ছে। যদিও বিতরণকালে নিয়ম মেনে চলার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে, কিন্তু সেখানে বাস্তবচিত্র থাকছে ভিন্ন।


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল