২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভূমি অধিগ্রহণে অগ্রগতি নেই : ব্যয় বৃদ্ধি ১০ গুণ

হালদা নদীর তীর রক্ষা
-

বর্ধিত মেয়াদেও ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি। এখন আবার সংশোধনী এনে সেই ব্যয় তিন কোটি টাকা থেকে ১০ গুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পে কিছু কিছু কাজের পরিমাণ কমানো হলেও ব্যয় দ্বিগুণ করা হয়েছে। যা নিয়ে খোদ পরিকল্পনা কমিশনেই প্রশ্নে উঠেছে। নির্ধারিত মেয়াদে চট্টগ্রামের হালদা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পটি সমাপ্ত না করায় বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় বেড়েছে। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ দ্বিতীয় দফায় এসে মোট ১৩৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত আড়াই বছরে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি নিয়েও কমিশন সস্তুষ্ট নয়। এখন প্রকল্পটি মেয়াদ তিন বছর তিন মাস চলছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় হালদা নদীর উভয় তীর প্রতিরক্ষা, বাঁধ নির্মাণ এবং বিদ্যমান রাস্তা কাম বাঁধ উঁচুকরণের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা নদী ভাঙন ও জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করার জন্য ২০১৭ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। এই প্রকল্পটি ২০১৫ সালে গঠিত কারিগরি কমিটি থেকে সুপারিশও করা হয়। যার অনুমোদন ব্যয় ধরা হয় ২১২ কোটি ৮ লাখ টাকা। যা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অর্থাৎ তিন বছরে সমাপ্ত করার কথা ছিল। কিন্তু এক দফায় ব্যয় বৃদ্ধির পর দ্বিতীয় দফায় ১০২ কোটি টাকার বেশি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যায়ে এসে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করে কিছু অঙ্গ দ্বিতীয় সংশোধনীতে ডিপিপিতে যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বাঁধের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন, কিছু ভৌত কাজের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস বৃদ্ধি, রেট সিডিউল পরিবর্তন, নতুন অঙ্গ সংযোজন, ভূমি অধিগ্রহণ পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির কারণেই মোট ব্যয় বেড়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যুক্তি।
প্রস্তাবনা তথ্যানুযায়ী, নদীর উভয় তীর প্রতিরক্ষার কাজ ১২.১২ কিলোমিটার থেকে এখন ১৩.৩৯০ কিলোমিটার, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ ০.৫৫০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ১.৭১৫ কিলোমিটার, বাঁধ নির্মাণকাজ ৬ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৯.৩৭৯ কিলোমিটার, বাঁধ পুনরাকৃতীকরণ ১৫ কিলোমিটার থেকে কমে ১৪.৪৪২ কিলোমিটার, বাঁধ নির্মাণসহ রাস্তা উঁচুকরণ ৪.০০৮ কিলোমিটার থেকে হ্রাস করে ১.৩০৭ কিলোমিটার করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে সাতটি পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ করার হবে। আর ভূমি অধিগ্রহণ ১.৪০ হেক্টর করার কথা থাকলেও তা বাড়িয়ে ২.৭৫৩ হেক্টর করার প্রস্তাব নতুন করে যুক্ত করা হয়ছে। আড়াই বছরে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। যেখানে অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৪১ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ মাঝপথে এসে এখন বাস্তবায়নকারী সংস্থা পরিবর্তনের প্রস্তাব করছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, মূল প্রকল্পে ১২.১২ কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষার জন্য ২১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা ধরা হয়। অর্থাৎ, কিলোমিটারে ব্যয় ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এখন বলা হচ্ছে ১৩.৩৯ কিলোমিটারের কথা। আর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ফলে কিলোমিটারে ব্যয় বেড়ে হচ্ছে, ১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অন্য দিকে মূল ডিপিপিতে ১.৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের কথা ছিল। যার জন্য তিন কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয় কিন্তু গত ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কোনো জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এখন সংশোধনীতে এসে জমি অধিগ্রহণ ২.৭৫৩ হেক্টরের কথা বলে ব্যয় ৩০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পে দশমিক ৫৫০ কিলোমিটার ফ্লাডওয়াল নির্মাণের জন্য পাঁচ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। যেখানে ব্যয় হয়েছে মাত্র এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। এখন এ খাতে কাজ ১.৭১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে ব্যয় প্রায় পাঁচগুণ বাড়িয়ে ২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া ছয় কিেেলামিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ছয় কোটি ১২ লাখ টাকা ধরা হয়। এখন সেই কাজ ৯.৩৭৯ কিলোমিটারে উন্নীত করে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যেখানে প্রতি মিটারে ব্যয় ছিল ১০ হাজার টাকা, এখন সেই ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৮৪৮ টাকা।
ব্যয় পর্যালোচনার তথ্যানুযায়ী, ১৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতীকরণের জন্য বরাদ্দ ছিল ছয় কোটি ৮২ লাখ টাকা। এখন সেই কাজ কমিয়ে ১৪.৪৪২ কিলোমিটার করা হয় কিন্তু ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণসহ রাস্তা উঁচুকরণে ব্যয় ধরা হয় পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সংশোধনীতে সেই কাজ কমিয়ে ১. ৩০৭ কিলোমিটার করা হয়েছে কিন্তু ব্যয় না কমিয়ে উল্টো বাড়ানো হয়েছে ছয় কোটি ৫৮ লাখ টাকায়।
পরিকল্পনা কমিশনের সেচ উইংয়ের অভিমত, প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশ বাস্তবায়ন করে এসে অঙ্গগুলোর ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো খাতে কাজের পরিমাণ কমে গেলেও সেই খাতে ব্যয় দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নেই। আবার আড়াই বছরে প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি। এখন সেই অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় তিন কোটি টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেকোনো প্রকল্প যখনই সংশোধনের প্রস্তাব আসে তখনই তার বিভিন্ন খাতের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির প্রস্তাব কমিশনের কাছে দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা

সকল