২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২০ হাজার সুরক্ষা পোশাক বানাবে বিজিএমইএ

-

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কর্মরত ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য ২০ হাজার সুরক্ষা পোশাক বানাবে তৈরউ পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এর মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি সাধারণ সুরক্ষার জন্যও এ পোশাক কাজে লাগবে বলে জানায় বিজিএমইএ। তবে রফতানির উপযুক্ত পিপিই বানাতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিজিএমইএ গতকাল জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিজিএমইএকে পিপিই সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে। এ মুহূর্তে বিতরণের উদ্দেশ্যে বিজিএমইএ প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ হাজার পিপিই পোশাক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এগুলো প্রথম স্তরের পিপিই (লেভেল-১)-এর পরিপূরক হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার ও কর্মীদের প্রয়োজন লেভেল ৩/৪ পিপিই। পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে পিপিই তৈরি করছেন, তা সনদপ্রাপ্ত নয়। এগুলো শুধু শতভাগ পানি প্রতিরোধক এবং এর নকশা স্বাস্থ্যবিষয়ক পেশাজীবীরা যে ধরনের পিপিই ব্যবহার করেন তার কাছাকাছি। এই পিপিই পোশাক সেসব ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, যারা আতঙ্কিত হয়ে কর্মস্থলে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এই ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আশা করছেন শুধু যে করোনা উপসর্গধারী রোগীদের চিকিৎসা চলাকালে পিপিই ব্যবহার হবে, তা নয়; বরং তারা পেশাগত সব কর্মকাণ্ডে সুরক্ষা পাবেন।
এতে আরো বলা হয়, যেহেতু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্মুখ সারির স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো ধরনের সুরক্ষা নেই তাই বিজিএমইএ নিজেদের সম্পদ দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নিয়েছে। পিপিইএর ফেব্রিক্স ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে এরই মধ্যে বিজিএমইএ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা এর মহাপরিচালকের (ডিজিএইচএস) কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে। ডিজিএইচএস বিজিএমইএর প্রস্তাবিত পিপিইকে লেভেল-১ পরিপূরক হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন।
বর্তমানে বিজিএমইএর অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠান ফেব্রিক্স দানে এগিয়ে এসেছে। এ ছাড়া আরো অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ কারখানায় বিনামূল্যে পিপিই তৈরি করার বিষয়ে বিজিএমইএকে প্রস্তাবনা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমইএ পরিকল্পনা নিয়েছে এসব ফেবিক্স ক্রয়ের জন্য একটি তহবিল গঠন করার। স্থানীয় অনেক বস্ত্র কারখানা, যারা কিনা বিজিএমইএএর সদস্য তারাও কম দামে ফেব্রিক্স বিক্রি করে বিজিএমইএর পিপিই তৈরির উদ্যোগের সাথে একাত্মতা পোষণ করছে। বিজিএমইএ এই পিপিইগুলো ডিজিএইচএসসহ অন্যান্য সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবরাহ করবে। একই উদ্দেশ্যে বিজিএমইএ অন্য এনজিওদের সাথেও কাজ করছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
বিজিএমইএ জানায়, সাধারণত এ দেশের পোশাক উদ্যোক্তারা পিপিই প্রস্তুত করেন না। পিপিই প্রস্তুত করতে যে ফেব্রিক্স ব্যবহার করা হয়, তার মেডিক্যাল গ্রেড থাকে এবং বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান বজায় রেখে তা প্রস্তুত করতে হয় এবং এই ফেব্রিক্স মূলত চীন থেকে আমদানি করতে হয়। আবার পিপিই পোশাক তৈরির জন্য কারখানাগুলোকে বিশেষ ধরনের মেশিনারিজ ব্যবহার করতে হবে। কারখানায় জীবাণুমুক্ত পরিবেশে উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এসবের জন্য প্রশিক্ষণও দরকার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশী কারখানায় পিপিই তৈরি করার জন্য কমপক্ষে ছয় মাস অথবা এর অধিক সময় লাগবে।
উদ্যোক্তারা বিকল্প উৎস হিসেবে চীন থেকে পিপিই-এর ফেব্রিক্স আনছেন। এতে লিড টাইম ১৫ থেকে ২০ দিন লাগবে। যেহেতু বিমানপথে এখন দীর্ঘসূত্রতা অনেক বেশি। যে মুহূর্তে এই আমদানিকৃত ফেব্রিক্স উদ্যোক্তাদের হাতে আসবে তখনই তারা পিপিই তৈরিতে এই ফেব্রিক্স ব্যবহার করা শুরু করবেন। বিজিএমইএর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশে^র বিভিন্ন দেশে পিপিই রফতানি করা এবং আমরা চাই অতি দ্রুততার সাথে এ কাজটি করতে। এ ব্যাপারে আমরা এরই মধ্যে আইএলও, ডব্লিউএইচও, ডব্লিউএফপি ও ইউনিসেফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা করেছি। আমাদের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে পিপিই তৈরি করতে পারি সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। সংস্থাগুলোও সরবরাহ লাইনে সহযোগিতা প্রদানসহ কারিগরি জ্ঞান বিনিময়ে আমাদেরকে সাহায্য করবে বলে আশ^স্ত করেছে। এই প্রচেষ্টা নিয়ে এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য নিয়ে আমাদের এই শিল্পের ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে রফতানি উপযুক্ত পিপিই বানানোর যাবতীয় কারিগরি জ্ঞান অর্জন করতে এবং প্রয়োজনীয় মেশিন ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি হাতে পেতে।


আরো সংবাদ



premium cement