২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডাক্তার-আউট সোর্সিং কর্মচারীদের মধ্যে পিপিই ভাগাভাগি : আতঙ্কে ব্রাদার-নার্সরা

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল
-

টঙ্গীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া কিছু আউট সোর্সিং কর্মচারী ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে গেলেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধক পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই)। এ ঘটনায় সরাসরি চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত হাসপাতালের নার্স ও ব্রাদারদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। পিপিই-বিহীন এসব স্থাস্থ্যকর্মী অনেকটা আতঙ্কের মধ্যেই দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে নার্স ও কর্মচারীদের নির্ভয়ে সব রোগীর চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে এরই মধ্যে প্রায় দুই শ’ সেট পিপিই (হ্যান্ড গ্লাভস ড্রেস, জুতা, চশমাসহ আনুষঙ্গিক ইকুইপমেন্ট) সরবরাহ করা হয় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের একাধিক নার্স ও ব্রাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রথম অবস্থায় সরকারিভাবে হাসপাতালে কর্মরত প্রায় ২৫ জন ডাক্তার, ৬৩ জন নার্স-ব্রাদার ১০-১২ জন কর্মচারী এবং প্রায় ৬৫ জন আউট সোর্সিং কর্মচারীর জন্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ১০০ সেট হ্যান্ড পিপিই সরবরাহ করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে কর্মরত ২৫ জন ডাক্তার এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া কিছু আউট সোর্সিং কর্মচারী সেগুলো ভাগাভাগি করে নেয়। তারা জরুরি বিভাগের জন্য মাত্র ৩ সেট ও সম্ভাব্য করোনা আক্রান্ত রোগীদের নির্ধারিত ওয়ার্ডে নার্সদের জন্য মাত্র ৬ সেট পিপিই রেখে যায়। অবশিষ্ট পিপিইর কোনো হদিস নেই।
অন্য দিকে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ আরো ১০০ সেট পিপিই হাসপাতালে সরবরাহ করে। এসব পিপিই সরাসরি চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত নার্স-ব্রাদার কিংবা কোনো কর্মচারীকে না দিয়ে দায়িত্বশীলরা ভাগাভাগি করে নেন। পিপিই-বিহীন চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত নার্স-ব্রাদারসহ অন্যান্য কর্মচারী জানান, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার তাদেরকে জানিয়েছেন, এসব পিপিই নাকি নার্স বা ব্রাদারদের জন্য আসেনি। তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আরো বলেন, আমরা রাত-দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে আসা বিভিন্ন রোগীকে সেবা দিয়ে আসছি। কার মধ্যে ভাইরাস আছে আমাদের জানা নেই। সারাক্ষণ আমরা আতঙ্কে থাকি। পিপিই পেলে আমরা অন্তত আতঙ্কমুক্তভাবে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত থাকতে পারতাম। কিন্তু আমাদেরকে পিপিই না দিয়ে ডাক্তার এবং আউট সোর্সিং কর্মচারীরা সেগুলো ভাগাভাগি করে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের এই হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, ব্রাদার্স, কর্মচারী ও আউট সোর্সিং কর্মচারীসহ প্রায় ১৬৫ জন কর্মরত রয়েছেন। অথচ সরকারি ও বেসরকারিভাবে ২০০ সেট পিপিই এসেছে। জন প্রতি ১ সেট করে বিতরণ করা হলেও আরো ৩৫ সেট উদ্বৃত্ত থাকে। অথচ এসবের কোনো হদিস নেই।
এ বিষয়ে হাসপাতালের নার্সিং সুপারেন্টেন্ডেন্ট খাদিজা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নার্স ও ব্রাদারদের সুরক্ষার কথা ভেবে আমি তত্ত্বাবধায়ক স্যারের সাথে কথা বলেছি, তত্ত্বাবধায়ক স্যার বলেছেন, এগুলো শুধু ডাক্তারদের জন্য এসেছে। তার পরও যারা ডিউটিতে আছেন এমন অনেককে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা: পারভেজ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. মো: নিজাম উদ্দিন স্যারের নামে সরকারিভাবে কিছু পিপিই বরাদ্দ হয়েছে এবং বেসরকারিভাবেও কিছু স্যারের নামেই হাসপাতালে এসেছে; তবে কতগুলো এসেছে আমার জানা নেই। আমি নিজেও এখনো পাইনি, তবে নার্স বা ডাক্তার যারা ডিউটিতে এসেছেন তারা পেয়েছেন। নার্স ও ব্রাদারদের অভিযোগের বিষয়টি আমি স্যারকে জানিয়েছি। তিনি খুব শিগগির ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ড. মো: নিজাম উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারিভাবে কিছু পিপিই এসেছে; তবে কতগুলো এসেছে তা এ মুহূর্তে সঠিক বলতে পারব না। এ বিষয়ে অফিস সময়ে এলে সঠিক তথ্য দিতে পারব। এগুলো শুধু করোনা বিভাগ ও ইমার্জেন্সি বিভাগে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সদের জন্য পাঠানো হয়েছে। তার পরও পরিস্থিতি মোতাবেক হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের সময়সাপেক্ষে দেয়া হবে। বেসরকারিভাবে কতগুলো পিপিই এসেছে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি কোথা থেকে শুনেছেন? বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে করোনা ওয়ার্ডে কিছু এবং যারা ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত তাদের মাঝে এরই তমধ্যে কিছু বিতরণ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement