২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় বন্ধ দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়
-

করোনার প্রভাবে চলমান কাজের ৪০ ভাগের বেশি অগ্রগতি নিয়ে থমকে গেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দোহাজারী-কক্সবাজার ঘুমধুম নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
দোহাজারী-কক্সবাজার ভায়া মিয়ানমার সীমানা ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রস্তাবিত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আর দ্বিতীয় লটে রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে একই বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে। ইতোমধ্যে সব প্রতিকূলতা এবং করোনাভাইরাসের প্রভাব উপেক্ষা করে দুই লটের কাজ ৪০ ভাগ এগিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান। জানা গেছে, এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার ভায়া ঘুমধুম ১২৯ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে দুই ধাপে। প্রকল্পের প্রথম ধাপে দুই লটে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপের পৃথক দুই লটে নিয়োজিত চায়না এক্সপার্টদের উপস্থিতি না দেখা গেলেও প্রকল্প কাজ খুব দ্রুতই এগিয়ে চলছিল। আর এভাবে প্রকল্প কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় ক্রমে দৃশ্যমান হয়ে উঠছিল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ। প্রথম ধাপে রেলপথ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে যৌথভাবে চায়নার দু’টি ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশ সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়।
দুই হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় প্রথম লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণকাজের চুক্তি হয়েছিল চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও দেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মধ্যে।
দ্বিতীয় লটে তিন হাজার ৫০২ কোটি পাঁচ লাখ দুই হাজার টাকায় রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের চুক্তি হয় চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন(সিসিইসিসি) এবং দেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সাথে।
চুক্তির শর্তানুযায়ী কাজ শুরু হওয়ার তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ চলতি ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কারণে আপাতত থমকে গেছে নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরই দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত অবশিষ্ট ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে কিছু নির্মাণসামগ্রী আপাতত আনতে না পারায় প্রকল্প কাজে আপাতত কিছুটা স্থবিরতা পরিলক্ষিত হলেও কাজ চলছিল ঠিকভাবেই। কিন্তু গতকাল যোগাযোগ করা হলে তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির প্রকৌশলীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা জানান, তাদের সাড়ে চার শ’ ইকুইপমেন্ট চালক শ্রমিকসহ কয়েক শত লোককে ছুটি দেয়া হয়েছে। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর আনাদ কুনকার্নি বলেন, প্রায় সাড়ে ১২ শ’ শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে ছুটি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কাজের অগ্রগতির মধ্যেই কাজ বন্ধ করে দেয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। পিছিয়ে যাবে নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম-দোহাজারী ভায়া ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। বহুল প্রত্যাশিত এই রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসছে চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বলেন, কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪০ ভাগ। যা সন্তোষজনক হলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে নির্মাণসামগ্রী আনা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কাজে বিঘœ সৃষ্টি হলেও প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী।


আরো সংবাদ



premium cement