২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

উত্তরাঞ্চলে মানুষের আরেক দফা নাভিশ্বাস বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি

-

বিদ্যুতের দাম বাড়ায় উত্তরাঞ্চলের মানুষের নাভিশ্বাস আরেকদফা বাড়ল। বিশেষ করে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত এবং কৃষকদের মাথায় আবারো বাড়তি খরচার খড়গ। কিভাবে সামাল দেবেন তারা, এই চিন্তায় দিশেহারা তারা। ক্ষুব্ধ মানুষের দাবি দাম আগের চেয়েও কমানো হোক।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি শুক্রবার দিনভর ছিল উত্তরের সব-শ্রেণী পেশার মানুষের আলোচনায়। বেলা সাড়ে ১০টায় রংপুর মহানগরীর খামারমোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেল চায়ের দোকানসহ সব জায়গায় সবার মুখেই বিদ্যুতের বাড়তি দামের প্রসঙ্গ। জানতে চাইলে হোটেল মালিক আরিফুর রহমান জানালেন, যে বেচাবিক্রি হয়, তাতে সংসার সুন্দরভাবে চালাতে পারি না। কর্মচারীদের বিল বকেয়া থাকে প্রায় প্রতিমাসেই। প্রায়ই অসময়ে তাদের বিল দেই। এবার আরো বাড়ল বিদ্যুতের দাম। এ কারণে যে শুধু বিদ্যুতের জন্যই বাড়তি টাকা দিতে হবে তা নয়; এই দামের অজুহাতে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। খাবার মেকিং খরচ বেশি হবে। কিন্তু গ্রাহকরা বাড়তি দামে হোটেলে খাবেন না। গ্রাহকদের কাছে বাড়তি দাম ধরলে এই নিয়ে বচসা করতে হবে। তার মানে হলো আয় কমে যাবে। আর ব্যয় বাড়বে। এভাবে ব্যবসাবাণিজ্য করে জীবনধারণ করাটা খুব মুশকিল।
কথা হয় ছাত্রাবাসের বাবুর্চি সুহাসিনী বেগমের সাথে। তিনি জানালেন, ছাত্রাবাসে কাজ করে পাঁচজনের সংসার চালাই। এমনিতেই কারেন্ট আমরা কম খরচ করি। তারপরেও অনেকগুলো বিল দেয়। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ল। তাহলে কিভাবে আমরা চলব। খরচ করব কী, বিদ্যুতের বিল দেবো কী। এভাবে গরিব মানুষকে আরো মারার বুদ্ধি করেছে সরকার। আমরা চাই দাম কমুক। আমরাও বাঁচি।
ফুটপাথের চা বিক্রেতা ফারিহা বেগম জানালেন, ১০ টাকা যদি রোজগার করি, বিদ্যুতের বিল যদি হয় ২০ টাকা, তাহলে আমরা করব কী। আমাদের বাঁচার উপায় কী, সরকারকে তোমরা বলো, বিদ্যুতের দাম কমুক।
অটোচালক শাহরিয়ার আলম বললেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ার কথা শুনে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই গ্যারেজে চার্জের দাম ডাবল বাড়িয়ে দিয়েছে। আয় তো আমাদের আগের মতোই আছে। চার্জ আর জমার বিল দিতে গেলে এখন গুণে দেখতে পাই ১০০ টাকা নাই। গ্রাহককে যদি বলি ভাড়া বৃদ্ধির কথা তাহলে লাঠালাঠি হয়ে যাবে।
কলেজশিক্ষক শাফিউর রহমান জানালেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে আমার পরিবারে। এখন যদি বাড়িতে এসি, ফ্রিজসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী চালাতে যাই, তাহলে অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনার টাকা থাকবে না আমার। তাই ভাবছি এসিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রি করে দেবো।
এ দিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় ক্ষোভের অন্ত নেই কৃষকদের। বোরো মওসুমটা কিভাবে পার করবেন, সেটা নিয়ে চিন্তায় তারা।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর পাঠানপাড়ায় কথা হয় কৃষক আব্দুস সালামের সাথে। তিনি জানালেন, আমার এবার মরণদশা। এমনিতে ঋণ করে বোরো লাগালাম। এখন দেখি বিদ্যুতের দাম বাড়ল। সেচ পাম্পওয়ালা বৃহস্পতিবার রাতেই জানিয়ে দিয়েছে দোন প্রতি ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। সার, কৃষাণ, বীজ সবগুলোর দাম বেশি। এখন আবারো বাড়ল সেচের দামও। তার ওপর ধানের দাম নেই। এভাবে আর আবাদ করা সম্ভব না। তাই পরিবারের সাথে পরামর্শ করে বৃহস্পতিবার রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামীতে আর বেশি করে ধান লাগাব না। নিজের পরিবারের জন্য মওসুমে যে চালের প্রয়োজন হয, সেই পরিমাণ জমিতেই শুধু ধান লাগাব। প্রয়োজনে জমি পড়ে থাকবে।
একই ধরনের কথা বললেন, সেখানকার কৃষক আব্দুল আলিম, সাদেকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, লিট চৌধুরী, শাহীন আলম, লিমন। তারা সবাই আগামীতে ধান চাষ কমানোর কথা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। সরকারকে দেখতে হবে সাধারণ জনগণের কথা। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রভাব সব জায়গায় পড়েছে। এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement