২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়ে ঘুষ আদায়ের সিন্ডিকেট ঘুষের ৯৩ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা আটক সার্ভেয়ারকে কারাগারে প্রেরণ

-

কক্সবাজারে ঘুষের টাকাসহ র্যাবের হাতে আটক ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়ের (এলএ) সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ওয়াসিমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সদর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। র্যাব সূত্র মতে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াসিম ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে একপ্রকার বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি ভূমি মামলার বিপরীতে বড় অঙ্কের কমিশন নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেছে, এ জন্য অর্ধশতাধিক দালাল কাজ করছে। একই সাথে এই কমিশনের টাকা সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাদের পকেটেও যায় বলে সে জানিয়েছে। এ দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় এসব ঘুষ লেনদেনের জন্য একটি সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫ এর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়ে র্যাব ১৫-এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ জানান, সার্ভেয়ারের বাসা থেকে ৯৩ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় পলাতক সার্ভেয়ার ফরিদ ও ফেরদৌসের পাশাপাশি সিন্ডিকেট সদস্যদের আটকের চেষ্টা চলছে। কক্সবাজার র্যাব-১৫ অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান জানান, কক্সবাজারে সরকারের অর্ধ শতাধিক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ কার্যক্রমও চলছে। এ ভূমি অধিগ্রহণকে ঘিরে সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্র জমির মালিকদের নানাভাবে জিম্মি করে বড় অঙ্কের টাকা কমিশন হিসেবে আদায়ের অভিযোগ ভুক্তভোগী জমির মালিকরা র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ঘুষের ৯৩ লাখের বেশি টাকাসহ একজনকে আটক সম্ভব হলেও অন্য ২ জন পালিয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন ব্যাংকের বেশ কয়েকটি চেক ও নথিপত্রও উদ্ধার করা হয়। ভুক্তভোগীদের মতে, শুধু এরা নয়, এলএ অফিসের অধিকাংশ সার্ভেয়ার, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অফিসাররা নানা কায়দায় জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার একটি অংশ এলআর ফান্ডেও যায় বলে জেলার শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছেও কোনো প্রতিকার মিলে না। বাধ্য হয়ে দালাল ও সার্ভেয়ারের দারস্থ হতে হয় ভূমি মালিকদের। ফলে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন ছেড়েই দিতে হয় জমির নিরীহ মালিকদের। অনেক ক্ষেত্রে দালালদের সাথে চিহ্নিত কয়েকজন সাংবাদিকও এসব কমিশনবাণিজ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এ দিকে মেগা-প্রকল্প চালুর পর ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগে কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলমসহ বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার কারাভোগ করেছেন। নিকট অতীতেও বর্তমান ডিসিসহ বেশ কয়েকজনের নামে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা ফাইল করেছিলেন মহেশখালীর এক ব্যক্তি। অবশ্য আদালত তা আবার খারিজও করেছিলেন। এর অল্প দিন না যেতেই বুধবার র্যাবের অভিযানে ঘুষের প্রায় কোটি টাকাসহ সার্ভেয়ার আটকের ঘটনা ঘটল। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন বলেন, ‘জেনেছি আমার অফিসের এক সার্ভেয়ার বেশ কিছু টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছে। এটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলআর ফান্ড ও তাদের নিত্য অপরাধ সম্পর্কে অভিযোগগুলো সত্য নয় দাবি করে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, উদ্ধারকৃত চেকগুলো প্রশাসনের কনফারেন্স রুমে উপকার ভোগীদের ডেকে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কোথাও হয়রানির শিকার হয় কি না। কিন্তু কেউ অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না এবং অপকর্মগুলোও আড়াল থাকে। কারো এমন অপরাধ সামনে আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবো না। উল্লেখ্য বুধবার পৃথক অভিযান চালিয়ে ঘুষের ৯৩ লাখ টাকা মোহাম্মদ ওয়াসিম (৪৫) নামের এক সার্ভেয়ারকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-১৫) সদস্যরা। এ সময় র্যাবের অভিযানের খবরে পালিয়ে যায় অপর দুই সার্ভেয়ার ফরিদ ও ফেরদৌস। এ সময় শহরের বাহারছড়া ও তারাবনিয়ারছড়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়। তারাবনিয়ারছড়ায় বসবাসরত মোহাম্মদ ওয়াসিমের বাসা থেকে ছয় লাখ টাকা, বাহারছড়া এলাকার সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ফরিদের বাসা থেকে ৬০ লাখ ও মোহাম্মদ ফেরদৌসের বাসা থেকে ২৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement