২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আজ থেকে ঢাকার ১৬ ওয়ার্ডের সবাইকে খাওয়ানো হবে কলেরার টিকা

-

রাজধানী ঢাকার ছয় থানার ১৬ ওয়ার্ডের সবাইকে আজ বুধবার থেকে ডায়রিয়া বা কলেরার টিকা খাওয়ানো হবে। মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুস সালাম, কামরাঙ্গীর চর, হাজারীবাগ ও লালবাগ থানার সকলকে এই টিকা খাওয়ানো শেষ হবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি। এই এলাকাগুলো নির্বাচন করা হয়েছে বেশি কলেরাপ্রবণ এলাকা হিসেবে। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিডিসির পরিচালক অধ্যাপক ডা: শাহলীনা ফেরদৌসী ও আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. ফিরদৌসি কাদরী কলেরা এবং এ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভির আর্থিক সহায়তায় এই টিকাদান উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টাস্কফোর্স অন কলেরা কন্ট্রোলের (জিটিএফসিসি) মাধ্যমে ইউনিসেফের সহায়তায় মুখে খাওয়ার উপযোগী ২৪ লাখ কলেরার টিকা ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। একমাস অন্তর অন্তর দুইটি ডোজের মাধ্যমে এক বছর অথবা এর চেয়ে বেশি বয়সীদের খাওয়ানো হবে। বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) সহায়তায় আইসিডিডিআরবি এই টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইউবায়োলোজিক্স কোম্পোনি লিমিটেডের তৈরি ইউভিকল প্লাস নামের মুখে খাওয়ার এই কলেরার টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত ও নিরাপদ।
সংবাদ সম্মেলনে শাহলীনা ফেরদৌসী বলেন, কলেরা একটি খাদ্য ও পানিবাহিত প্রাচীন রোগ। গঙ্গা বদ্বীপ থেকে শুরু করে ইউরোপ ও আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বর্তমানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার ৪৭টি দেশে কলেরা আছে। যেসব এলাকায় নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে সেখানে কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। দেহে পানিশূন্যতা সৃষ্টিকারী কলেরা একটি ডায়রিয়াজাতীয় রোগ। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ১৩ থেকে ৪০ লাখ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশসহ আটটি উন্নয়নশীল দেশে বছরে প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছয় থানার উল্লিখিত ওয়ার্ডে ৩৬০টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকা খাওয়ানো হবে। কর্মজীবীদের সুবিধার্থে কিছু টিকাদান কেন্দ্র সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য অর্জিত হবে। কলেরা টিকা গ্রহণে কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০৩০ সালের মধ্যে কলেরার পাশাপাশি ডায়রিয়া থেকে মানুষ মুক্ত থাকতে পারবে।
রাজধানীর আরো অনেক থানা থাকতে এই ছয়টিকে কেন এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হলো? এ প্রশ্নের উত্তরে ড. ফেরদৌস কাদরী বলেন, আইসিডিডিআরবিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই এলাকাগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। দেখা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যারা মহাখালী কলেরা হাসপাতালে আসে তাদের মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকার প্রতি হাজার রোগীর ভেতর ৪.৯ শতাংশ, আদাবর এলাকায় ১.৩ শতাংশ, দারুস সালাম এলাকার ০.৩ শতাংশ, লালবাগ এলাকার ২.১ শতাংশ, কামরাঙ্গীরচর এলাকার ১.৫ শতাংশ, হাজারীবাগ এলাকার ১.৭ শতাংশ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত। তিনি বলেন, প্রাথমিকপর্যায়ে ঢাকার ছয়টি এলাকায় শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে ঢাকার কলেরাপ্রবণ অন্যান্য এলাকা এবং সারা বাংলাদেশের কলেরাপ্রবণ এলাকাতেও এই টিকাদান কর্মসূচি চলবে।


আরো সংবাদ



premium cement