২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মাদরাসার অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন ডিসি-ইউএনওরা অর্থের বিনিময়ে যোগ্যদের বাদ দেয়ার অভিযোগ

-

সারা দেশে মাদরাসায় অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে নিয়োগ কমিটিতে মাঠ প্রশাসন অর্থাৎ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর আগে মাদরাসার শীর্ষ পদে নিয়োগ বোর্ডে এত দিন অধিদফতরের প্রতিনিধি রাখা হতো। অভিযোগ রয়েছে এই সুযোগ নিয়ে অধিদফতরের কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যোগ্যপ্রার্থীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত অযোগ্যদের নিয়োগের সুপারিশ করতেন। এমন অসংখ্য অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ডিসি ও ইউএনওর প্রতিনিধি মনোনয়ন দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে অধিদফতরকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি স্বীকার করে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মুনসী শাহাবুদ্দীন আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাদরাসা অধিফতরের কর্মকর্তা সব জায়গায় নেই। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও সুপার, ভাইস প্রিন্সিপাল নিয়োগ কমিটিতে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা থাকবে। জেলা পর্যায়ে ডিসির এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে এমন একটা চিঠি মাঠ প্রশাসনে দেয়া হয়েছে। এর ফলে নিয়োগপ্রক্রিয়ার জটিলতা কমার পাশাপাশি আরো স্বচ্ছতা আসবে বলে আমরা মনে করেছি। তাই অধিদফতরকে এ নির্দেশনা দিয়েছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মাদরাসা অধিদফতরের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ করে গত ১৫ জানুয়ারি মাদরাসা অধিদফতরে আবেদন করেছেন মো: মজিবুর রহমান। তিনি অভিযোগে বলেছেন, বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার মহিষকাটা নেছারিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার নিয়োগে প্রথম স্থান অধিকার করলে নিয়োগ বোর্ড তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু মাদরাসা অধিদফতরের ডিজির প্রতিনিধি উপ-পরিচালক (অর্থ) মো: শামছুজ্জামান তিন লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে তার নিয়োগ বাধাগ্রস্ত করতে তাকে মামলায় জড়িয়ে দিন। এতে তিনি আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। অভিযোগে বলা হয়েছে, দুর্নীতিবাজ উপ-পরিচালকের কারণে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গত ১৪ জানুয়ারি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার বাগাট দাখিল মাদরাসার সহসুপার পদে নিয়োগবঞ্চিত হয়ে অধিদফতরে অভিযোগ করেছেন মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম। তিনি অভিযোগে বলেছেন, গত বছরের ২৭ জুলাই ওই মাদরাসা সহসুপার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ১১ জানুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ বোর্ড অন্যায়ভাবে তাকে লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর দেয় এবং সার্টিফিকেটের প্রাপ্ত নির্ধারিত নম্বর কম দেয়। সাথে সাথে তিনি লিখিত আবেদন করলেও কোনো প্রতিকার পাননি। কিন্তু ডিজির প্রতিনিধি উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শামসুজ্জামান পুনঃমূল্যায়ন না করে উল্টো তাকে ভয়ভীতি দেখান।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ঝাপুয়া আশরাফিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসারা সুপার পদে নিয়োগের জন্য প্রথম হয়েও নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন মো: ফজলুল হক। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, তিনি দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ করে প্রথম হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ ফলাফল ঘোষণা করে তাকে নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ করেন। তবে নিয়োগ কমিটি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তাকে নিয়োগে টালবাহানা করে। এরপরে নিয়োগের জন্য বিভাগীয় সব দফতরে তিনি আবেদন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাদরাসা অধিদফতরে আবেদন করেন। কিন্তু অধিফতরের উপ-পরিচালক মো: শামছুজ্জামান প্রতিপক্ষের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। একই সাথে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগের অনুমতি দেন। প্রতিকার চাইলে মো: ফজলুল হকের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। উপ-পরিচালক তৎকালীন পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) ড. সরোয়ার আলমকে ক্ষেপিয়ে তুলেন। পরিচালক ও উপ-পরিচালক মিলে মো: ফজলুল হককে দফতরে ডেকে নিয়ে নাজেহাল করেন। এরপর মো: ফজলুল হক প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করলে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং চাকরি হলেও এমপিওভুক্ত করা হবে না বলে হুমকি দেন।
অভিযোগ রয়েছে, এভাবে সারা দেশে মাদরাসার প্রশাসনিক পদ তথা সহ-সুপার, সুপার, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগে অধিদফতরের ডিজির প্রতিনিধিরা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে যোগ্যপ্রার্থীকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিচ্ছেন। এতে করে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে দক্ষ শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলেও প্রশাসনিক পদে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ডে ডিজির একজন প্রতিনিধি থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement