২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ক্বণন’র অনুষ্ঠানে ড. নুরুল আমিন বাঙালির আশাবোধের সংগ্রামকে আল মাহমুদ কবিতায় জীবন্ত ও বাক্সময় করেছেন

-

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. নুরুল আমিন বলেছেন, ভাষার মাসে বাঙালির আশাবোধের সংগ্রামকে আল মাহমুদ তার কবিতায় জীবন্ত ও বাক্সময় করে গেছেন। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সংলগ্ন জীবনবোধের কথা আল মাহমুদের কবিতায় যেভাবে এসেছে তা আমরা আর কারো কাছে পাইনি। আধুনিক বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেই ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নরনারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহ ছন্দে ও অপূর্ব গাঁথুনিতে তার কবিতায় বারবার হৃদয়গ্রাহী হয়ে এসেছে।
গত শনিবার চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট গ্যালারি হলে ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গনের আয়োজনে বাংলা কবিতার প্রবাদ পুরুষ দেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণানুষ্ঠানে ড. নুরুল আমিন প্রধান অতিথি হিসেবে এই কথাগুলো বলছিলেন। ক্বণন সভাপতি আবৃত্তি শিল্পী মোসতাক খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু অনার্স কলেজের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মহিবুর রহিম এবং দেশের প্রথম আল মাহমুদ সংখ্যা ‘উপমা’ খ্যাত সম্পাদক ও প্রাবন্ধিক মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন, লেখক ও সাংবাদিক চৌধুরী গোলাম রব্বানী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্বণন কার্যকরী পরিষদ সদস্য আবৃত্তি শিল্পী সৌভিক চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাইমুম মুরতজা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. নুরুল আমিন বলেন, আধুনিক যুগের বাংলা ভাষার প্রধান কবি আল মাহমুদ বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সংলগ্ন জীবনবোধের কবি হিসেবে আমৃত্যু বাংলা ভাষার পাঠকদের মৃত্তিকালব্ধ একটি কাব্য ও সাহিত্য বোধ সৃষ্টির সাধনা করে গেছেন। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের আশা আকাক্সক্ষা, ব্যথা-সংগ্রাম সমস্ত কিছুই তার অলৌকিক কাব্যিক ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
আল মাহমুদের কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি তার পাঠকদের এমনভাবে মোহিত ও মুগ্ধ করে যার কোনো তুলনা হয় না। তিনি মূলত সত্য ও সুন্দরের অকৃপণ সাধক ছিলেন। তাই তার সাধনার দিব্য দৃষ্টিতে তিনি মেধাকে সত্য বলে জেনেছেন। তার শৈল্পিক প্রকাশে কখনওই পিছপা হননি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ নিযামুদ্দিন বলেনÑ আল মাহমুদ বাংলদেশের কবিতার প্রতিনিধিত্বশীল অন্যতম প্রধান কণ্ঠস্বর। তিনি কবিতায় কালের ইতিহাসকে ধারণ করেছেন। লাকজ শব্দ ও লৌকিক উপমায় আধুনিক কবিতার শরীরকে অলঙ্করণ করে মননশীল পাঠকদের হৃদয় জয় করেছেন কবি আল মাহমুদ। তার কবিতায় প্রতিভাত হয়েছে মাটি, মানুষ ও স্বদেশের চেতনালব্ধ দেশপ্রেম।
অধ্যাপক মহিবুর রহিম বলেন, বাংলা ভাষার মহৎ কবিদের অন্যতম আল মাহমুদ। বিস্ময়কর এক স্বতঃস্ফূর্তায় তার কবিতা প্রকল্প জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই স্বতঃস্ফূর্ততা অনেক কবির মধ্যেই পাওয়া যায় না। প্রতিটি কবিতা শিল্পমানসম্পন্ন করে তোলা সহজ কোনো বিষয় নয়। এই অসম্ভবকে আল মাহমুদ সম্ভব করেছেন।
লেখক ও সাংবাদিক চৌধুরী গোলাম রব্বানী বলেন, আল মাহমুদ আমাদের গৌরবের অনুষঙ্গ। তিনি ছিলেন বাঙালি জীবনের শ্রেষ্ঠ কথাকার ও স্বপ্নবণিক। কবি আল মাহমুদের মৃত্যুর পর দেশের প্রথম শোকসভাটি ক্বণন চট্টগ্রামে করে। আল মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতেও স্মরণানুষ্ঠান করে ক্বণন ইতিহাসে নাম লিপিবদ্ধ করে নিলো।
এরপরে ছিল আল মাহমুদের কবিতা নিয়ে আবৃত্তি শিল্পী মোসতাক খন্দকার গ্রন্থিত ও নির্দেশিত ‘আগুন দেখে জাগুন’ শীর্ষক বৃন্দ আবৃত্তি ও একক আবৃত্তি পরিবেশনা। আবৃত্তি পরিবেশন করেÑ আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ মোহাম্মদ, তৃষা সেন, সৌভিক চৌধুরী, জুনায়েদ শাওকি, শরীফ মাহমুদ, মোহাম্মদ ওয়াসিম, আবসার তানিম, সাইমুম মুর্তজা, সায়েম বিন আলিম, রুহুল্লাহ আকমল, মিজানুর রহমান, তমা দাশ, ফারুক আজম, সূচনা দাশ, শুভ্রা চক্রবর্তী, মেহরাজ, শারমিন, প্রেমা চৌধুরী, জয়তুন জবা, হোসাইন সোহেল। বিজ্ঞপ্তি।

 


আরো সংবাদ



premium cement