২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রূপ বদলাচ্ছে ঐতিহাসিক বাহাদুরশাহ পার্ক

তিন মাসের কাজ সাত মাসেও শেষ হয়নি
-

রূপ বদলাচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকা সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিবিজড়িত পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক। এ এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। একটি প্রকল্পের আওতায় বাহাদুরশাহ পার্ক তিন মাসের মধ্যে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরো চার মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। পার্কের উন্নয়নকাজের ৩০ শতাংশও শেষ হয়নি এখনো। সংশ্লিষ্টরাও বলতে পারছেন না কবে শেষ হবে পার্কের কাজ। এ দিকে পুনঃসংস্কার ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উন্নয়নকাজের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তিন মাসের জন্য পার্কে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সাত মাস পার হলেও এখনো জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়নি পার্কটি। এতে করে সমস্যায় পড়ছেন প্রাতঃভ্রমণকারীরা।
জানা যায়, বাহাদুরশাহ পার্ক সংস্কার প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। ‘জিট ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘প্রোমা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ দিকে ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পে অধীন পার্কটির উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পুরান ঢাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো পার্কটি সবুজ টিনের শেড দিয়ে ঘেরা। এর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে প্রধান ফটক দু’টি বন্ধ করে পার্কের সংস্কার কাজ চলছে। পার্কটির ভেতর চারপাশে হাঁটার জন্য দুই লেনে রাস্তা বানানোর কাজ করছেন শ্রমিকরা। এ ছাড়া ভেতরে সিপাহী বিদ্রোহের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের রঙের কাজ হচ্ছে। এ দিকে পার্কের ভেতর দর্শনার্থীদের বসার জায়গা এখনো তৈরি হয়নি। এ ছাড়া পার্কের চারটি ফটক, পার্কের ভেতর ঝরনার কাজও শুরু হয়নি। পার্ক ঘিরে নতুন করে দেয়াল নির্মাণকাজ আগের মতোই পড়ে আছে। আর ক্যাফেটেরিয়ার নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ শুরুই হয়নি।
ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরান ঢাকার মানুষদের বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাহাদুরশাহ পার্ক অন্যতম। এখানে এসে প্রাতঃভ্রমণ করেন পুরান ঢাকার লোকজন। আমিও প্রতিদিন সকালে এখানে এসে প্রাতঃভ্রমণ করতাম। কিন্তু সংস্কারের নাম করে দীর্ঘ দিন ধরে এটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ভেতরের কাজেরও কোনো অগ্রগতি নেই। এতে করে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ পর্যন্ত পুরান ঢাকায় যতগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে, কোনোটিই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারেনি। উল্টো জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বাহাদুশাহ পার্ক সংস্কার প্রকল্পের পরিচালক আল আমিন বলেন, এ বছরের শেষ দিকে আমরা সংস্কার কাজ শেষ করে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেবো। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজসহ আরো কয়েকটি কাজ রয়েছে। সেগুলো শেষ করতে আরো সময় লাগবে। এ সময় কাজের ধীরগতি নিয়ে জানতে চাইলে, তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
জানা যায়, ১৮ শতকের শেষ দিকে এখানে ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল। যাকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছিল আণ্ডাঘর। বিলিয়ার্ড বলকে স্থানীয়রা আণ্ডা নামে অভিহিত করত। সেখান থেকেই ‘আণ্ডাঘর’ কথাটি এসেছে। ক্লাব ঘরের সাথেই ছিল একটি মাঠ, যা আণ্ডাঘর ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার নেয়ার পর ওই ময়দানেই এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা পাঠ করে শোনান ঢাকা বিভাগের কমিশনার। সেই থেকে এ স্থানের নামকরণ হয় ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’। ১৯৫৭ সালের আগ পর্যন্ত ‘ভিক্টোরিয়া’ পার্কটি এ নামেই পরিচিত ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement