২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আত্মীয়ের বাইরেও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করার পক্ষে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী

-

মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার বিষয়ে নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্যদের দেয়ার সুযোগ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গত বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এটি একটি সঙ্কীর্ণ আইন। নিকটাত্মীয় ছাড়া আর কারো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার সুযোগ বর্তমান আইনে নেই। নিকটাত্মীয় যে সব সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আইনটি সংশোধন করতে হবে, যেন একজন সুস্থ-সবল মানুষ চাইলেই তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারেন, এটিই হবে প্রতিকার।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার অভিমত ব্যক্ত করেন। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তাদের মতামত দেয়ার জন্য আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন আদালত। মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের তিনটি ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো: শাহীনুজ্জামান শাহীন। সাথে ছিলেন আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। আদালতের পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ মতামত দিতে এসে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে ১০ হাজার মেডিক্যাল এক্সপার্ট দরকার, কিন্তু সেখানে আছে মাত্র ২০০ জন। তিনি বলেন, টাকা বা সম্পত্তি দান করার মতোই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে চাওয়াটা মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই শুধু নিকটাত্মীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের প্রক্রিয়াটি সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। তবে এর কারণে সমাজের দরিদ্র মানুষ যেন ক্ষতির স্বীকার না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে আইনে বিশেষ বিধান রাখারও প্রয়োজন রয়েছে বলেও আদালতকে জানান তিনি।
তবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত না করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবী মো: শাহীনুজ্জামান শাহীন। তিনি আদালতে জানান, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের সুযোগ আইনের মাধ্যমে প্রসারিত হলে দেশে এর অপব্যবহার বেড়ে যাবে। সমাজের নি¤œ শ্রেণীর মানুষ অভাবের তাড়নায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনাবেচায় মেতে উঠবে। এরপর আসকের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনাবেচা নিয়ে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। একই বিষয়ে প্রফেসর ড. হারুনুর রশিদ, প্রফেসর আছিয়া খানমসহ মোট পাঁচ ব্যক্তি আদালতে তাদের অভিজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের বিষয়টি মানবিক ও দাতব্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ চেয়ে আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছি।
মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের (১৯৯৯) তিনটি ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ধারা তিনটি হলোÑ ২ (গ), ৩ ও ৬। নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দাতার যোগ্যতা বিষয়ে বলা হয়েছে এ ধারাগুলোতে। ১৯৯৯ সালের আইনের কয়েকটি বিধি প্রণয়নে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এসব রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement