২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নিকাহনামায় ‘কুমারী’র পরিবর্তে অবিবাহিতা যুক্ত করার নির্দেশ

হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের রায়
-

নিকাহ রেজিস্ট্রি ফরমের পাঁচ নম্বর কলাম থেকে কনের বেলায় কুমারী শব্দটি বাদ দিয়ে অবিবাহিতা যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে ফরমের চার নম্বর কলামে (ক) সংযুক্ত করে বরের ক্ষেত্রে বিবাহিত, বিপতœীক ও তালাক প্রাপ্ত কি না শব্দগুলো সংযোজন করতে বলেছেন আদালত।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধন ফরমে (নিকাহনামার) বৈষম্য দূর করার বিষয়ে রুল নিষ্পত্তি করে গতকাল রোববার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
রায়টিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বলেছেন, কুমারী শব্দটা থাকা ঠিক না। সেটা বাদ দেয়া এবং কাবিনের ৪ নম্বর কলামে বরের ক্ষেত্রে সে বিবাহিত কি না, তালাক প্রাপ্ত কি না এবং বিপতœীক কি না সেটা লিখতে হবে। এ রায়ের ফলে কাবিননামায় লিঙ্গ বৈষম্য দূর হবে।
আইনুন্নাহার বলেন, কাবিননামার কলাম ৫-এ কনের ব্যাপারে কুমারী, বিধবা বা তালাক প্রাপ্ত কি না লেখা আছে। আমাদের আপত্তি ছিল ‘কুমারী’ শব্দটা নিয়ে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের প্রশ্নে এই শব্দটি চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলাম।
কোর্ট রায় দিয়ে বলেছেন, ‘কুমারী’ শব্দটা বাদ দিতে হবে। কারণ এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের ব্যাপার। কাবিননামায় এর উল্লেখ থাকা মানে বৈষম্য সৃষ্টি করা। আদালত রায়ে একটি কলামও যোগ করে দিয়েছেন। যেখানে লিখতে হবে বর বিবাহিত কি না, তালাক প্রাপ্ত কি না কিংবা বিপত্মীক কি না।
তিনি বলেন, নিকাহনামার ফরম পাকিস্তান আমলে তৈরি। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের জায়গায় বাংলাদেশ বসানো ছাড়া আর কোনো সংশোধন করা হয়নি।
আজকে একবিংশ শতাব্দীতে একটা মেয়ে কুমারী থাকল কি থাকল না এটা খুবই অসম্মানজনক। সিডও সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছি নারী-পুরুষের সমতার প্রশ্নে। সেখানে কাবিননামায় বিয়ের শুরুতেই আমাদের অধিকার খর্ব হয়ে যাচ্ছে।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনের ৯ ধারার ওই অনুচ্ছেদটি বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, নারীপক্ষ ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০১৪ সালেল ৭ সেপ্টেম্বর রিট আবেদন করে।
আবেদনে বলা হয়, রেজিস্ট্রেশন ফরমে (নিকাহনামায়) শুধু কনের বৈবাহিক অবস্থা ও তথ্য সন্নিবেশিত করার জন্য অনুচ্ছেদ রয়েছে। তবে বরের বৈবাহিক অবস্থা-সম্পর্কিত কোনো কলাম নেই। এটা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিষয়টি বৈষম্যমূলক এবং সংবিধান পরিপন্থী।
প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত রেজিস্ট্রেশন ফরমের (নিকাহনামা) পাঁচ নম্বর কলাম কেন বৈষম্যমূলক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। ওই কলাম থেকে ‘কুমারী’ শব্দটি বিলোপ করে ফরমটি সংশোধন করা এবং বর সম্পর্কিত কোনো ক্রমিক ফরমে কেন উল্লেখ করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে। গতকাল রোববার ওই রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন হাইকোর্ট।

 


আরো সংবাদ



premium cement