রাজধানীতে ‘স্টার বন্ড’ কিশোর গ্যাংয়ের ১৭ সদস্যকে কারাদণ্ড
ডাকাতি, মাদককারবারসহ জড়িয়ে পড়ছে বড় অপরাধে : র্যাব- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
বয়সে কিশোর, কিন্তু চুলের স্টাইল কিংবা অভিব্যক্তি সবই আক্রমণাত্মক। গ্যাং তৈরি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদককারবারসহ জড়িয়ে পড়ছে বড় অপরাধে। কখনো কখনো সামান্য ঘটনায় প্রতিপক্ষের সাথে খুনোখুনি তাদের কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। গত শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর রায়েরবাজারের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘স্টার বন্ড’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের ১৭ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। পরবর্তীতে তাদের প্রত্যেককে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তারা হলেনÑ জিসান (১৪), রায়হান (১৫), রাসেল হাওলাদার (১৬), সাদ্দাম হোসেন (১৬), বাপ্পি হোসেন (১৭), শাকিল বেপারী (১৬), সোহাগ শেখ (১৬), হৃদয় হোসেন (১৪), সাব্বীর হাওলাদার (১৬), রাব্বি হাওলাদার (১৭), নাঈম (১৬), মুন্না (১৬), সোহাগ (১৭), সাগর (১৬), সাব্বির বয়ান (১৬), মহিউদ্দীন (২৫) ও রনি হোসেন (২২)।
জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় ঘিরে গড়ে ওঠা এ কিশোর অপরাধী গ্রুপটির এক সদস্য এক বছর আগে প্রতিপক্ষ আরেক কিশোর গ্রুপের হাতে খুন হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ফের সশস্ত্র অবস্থায় রায়েরবাজার এলাকায় মহড়া দেয় তারা। সাদা পোশাকে র্যাবের এক সদস্য তাদের বাধা দিতে চাইলে তার ওপরও হামলা চালায় এরা। এরপরই ওই এলাকায় অভিযানে নামে র্যাব-২।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, এই এলাকায় যত ছিনতাই বা মাদক ব্যবসা হয় এর সাথে এই কিশোর গ্যাংগুলো জড়িত। এই গ্যাংদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ছিনতাইও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, মাদকও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তবে কথিত ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপের প্রধান সানাকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। এ ছাড়া ধরাছোঁয়ার বাইরে ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপের প্রতিপক্ষ কিশোর গ্রুপ ‘মোল্লা রাব্বি গ্রুপ’। র্যাব বলছে, প্রথমে এরা এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য হলেও, পরবর্তীতে এরা ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ জড়িয়ে পড়ে বড় অপরাধে। শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এ গ্যাং কালচার নির্মূলে সর্বাত্মক তৎপরতা চালানো হবে।
র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, গত এক বছর আগে ‘মোল্লা রাব্বি’ নামে কিশোর গ্রুপের হামলায় ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপের এক সদস্য নিহত হয়। গত শুক্রবার ছিল নিহত ওই কিশোরের মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপ মসজিদে মিলাদের আয়োজন করে এবং মিলাদের ছবি ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপের ফেসবুক পেজে পোস্ট করার পর ‘মোল্লা রাব্বি’ হা হা হা রিয়েকশন দেয়। তা দেখেই স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে চাপাতি, হাঁসুয়া, ছুরি নিয়ে দলবলে মোল্লা রাব্বি গ্রুপের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় সমবেত হয়। ওই দিন জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার নিরাপত্তা টহলে নিয়োজিত ছিল র্যাব-২ ব্যাটালিয়নের কয়েকটি দল। স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থান দেখে সাদা পোশাকের র্যাবের দুই সদস্য তাদের জিজ্ঞাসা করলে কোপানোর উদ্দেশ্যে তাদের ধাওয়া করে কিশোররা। তবে ভাগ্যক্রমে সাদা পোশাকের র্যাবের ওই দুই সদস্য সেখান থেকে নিরাপদে ফিরেন। এরপর শনিবার দিনভর স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্যদের ধরতে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে মোহাম্মদপুর এলাকার পৃথক তিন স্থান থেকে কিশোর গ্রুপের ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। সারওয়ার আলম বলেন, গ্রেফতার প্রত্যেক কিশোরই মাদক সেবন ও বিক্রি এবং ছিনতাইয়ে জড়িত। প্রত্যেকে মাদক বিক্রি ও সেবনসহ ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে টঙ্গীর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। মোল্লা রাব্বি গ্রুপের সদস্যদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।