২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোগল স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন কুমিল্লার শাহ সুজা মসজিদ

অনন্য স্থাপত্য
-

কুমিল্লা শহরের পুরনো গোমতী নদীর তীরে মোগল স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী শাহ সুজা মসজিদ। চার শ’ বছরের পুরনো মসজিদটি জানান দিচ্ছে কুমিল্লার অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। ১৬৫৮ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়। বাদশাহ আরোঙ্গজেবের ভাই শাহজাদা সুজার নাম অনুসারে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। কুমিল্লা মহানগরীর মোগলটুলীতে এর অবস্থান। প্রায় চার শ’ বছরের প্রাচীন মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করেন।
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী শাহ সুজা মসজিদটির নির্মাণ ইতিহাস সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ শ্রী কৈলাশ চন্দ্র সিংহ তার রামমালা গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘গোমতী নদীর তীরে কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলীতে সুজা মসজিদ নামক একটি ইষ্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ অদ্যপি দৃষ্ট হইয়া থাকে। এই মসজিদ সমন্ধে দু’প্রকার প্রবাদ শ্রুত হওয়া যায়Ñ (১) সুজা ত্রিপুরা জয় করিয়া বৃত্তান্ত চিরস্মরণীয় করিবার জন্য এই মসজিদ নির্মাণ করিয়াছিলেন। (২) মহারাজ গোবিন্দ মানিক্য সুজার নাম চিরস্মরণীয় করিবার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করিয়া এই মসজিদ নির্মাণ করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় প্রবাদ অপেক্ষা প্রথমোক্ত প্রবাদ সত্য বলিয়া আমাদের বিশ্বাস হইতেছে।’ শাহ সুজা (১৬৩৯-১৬৬০) বাংলার সুবাদার ছিলেন। শাহ সুজা ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে।
মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজটি পাশের দু’টি গম্বুজ থেকে আকারে বড়। আদি মাপ ছিল প্রস্থে ১৬ ফুট ও দৈর্ঘ্যে ৪৭ ফুট। সাম্প্রতিকালে মসজিদের দুই প্রান্তে ২২ ফুট করে দু’টি কক্ষ এবং সম্মুখ ভাগে ২৪ ফুট প্রশস্ত একটি বারান্দা নির্মাণ করায় আদি রূপ কিছুটা পাল্টে গেছে। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে একটি সুউচ্চ মিনারও নির্মাণ করা হয়েছে।
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের চার কোণে চারটি অষ্ট কোনাকার মিনার রয়েছে। এগুলো মসজিদের ছাদের অনেকটুকু উপরে উঠে গেছে। ফুল, লতাপাতা, জ্যামিতিক ও পদ্ম নকশায় অলঙ্কৃত প্রবেশপথ, কেবলা প্রাচীর ও গম্বুজ, কলসী চূড়া দ্বারা সুশোভিত গম্বুজের শীর্ষদেশসংবলিত মসজিদটি দেশের একটি উল্লেখযোগ্য প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন।
এ মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ মসজিদ যে পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম সে বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। আয়তনের দিক দিয়ে এ মসজিদ খুব বেশি বড় না হলেও এর কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সার্বিক অবয়ব আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে। শাহ সুজা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সফিকুল ইসলাম সিকদার জানান, এটি একটি প্রাচীন মসজিদ। এখন ১২ শতাধিক মুসল্লি এ মসজিদে একসাথে নামাজ পড়তে পারে। আরো বেশি মুসল্লি নামাজ পড়ার বিষয়ে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ে অনেকবার মসজিদটিকে সংস্কার করা হলেও এর স্থাপত্যশৈলী রাখা হয়েছে আগের মতোই। প্রতিদিনই স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মুসল্লি আসেন মসজিদটিতে নামাজ আদায়ের জন্য। দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও ছুটে আসেন মোগল ইতিহাসকে ধারণ করে চার শ’ বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এ মসজিদটি দেখতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement