১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক ডেলিভারির নতুন যুগে আদ্ দ্বীন

-

মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক ডেলিভারির নতুন যুগের সূচনা করেছে আদ্ দ্বীন হাসপাতাল। কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়া এখন থেকে এই হাসপাতালে যে কেউ চাইলেই ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসবের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে সম্প্রতি নতুন এই সেবা চালু করা হয়েছে। নতুন এই সেবা পেয়ে রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা অত্যন্ত খুশি। সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হাসপাতালের ডাক্তার নার্সরাও। এই সপ্তাহে তিনটি ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক ডেলিভারি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল।
গর্ভবতী মায়েদের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নির্বিচারে সিজারিয়ান অপারেশনের অভিযোগ যখন অধিকাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে জোরালো, ঠিক তখনই ঢাকার আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এমনিতেই আদ্-দ্বীনের পলিসিই হলো স্বাভাবিক ডেলিভারিকে উৎসাহিত করা। নতুন এই সেবায় ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে গর্ভবতী মায়েরা।
রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মগবাজারে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের অবস্থান। হাসপাতালের সাথেই রয়েছে আদ-দ্বীন মহিলা মেডিক্যাল কলেজ। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে মহিলা, পুরুষ ও শিশু সবার সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। তবে মহিলা রোগীর সংখ্যা এখানে সব সময়ই বেশি। প্রসূতি মায়েদের এখানে বিশেষ যতœ ও নিবিড় সেবাদানের কারণে অনেকের কাছে হাসপাতালটি বিশেষ আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে। দক্ষ চিকিৎসক, ধাত্রী ও নার্সদের সার্বক্ষণিক সেবা এবং স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবার কারণে হাসপাতালটিতে দিন দিন রোগীর ভিড় বাড়ছে।
এ বিষয়ে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালসমূহের পরিচালক ডা: নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, ‘আগামী প্রজন্মকে রোগপ্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন হিসেবে গড়তে সিজারিয়ান অপারেশনের চেয়ে নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যেসব মায়েরা গর্ভবতীর প্রাথমিকপর্যায়ে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সেবা নিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নরমাল ডেলিভারি এই হাসপাতালে হয়।
তিনি আরো বলেন, ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির জন্য বাচ্চা গর্ভধারণের পর থেকে আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা জরুরি। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিত চেকআপ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গর্ভের বাচ্চার অবস্থান লক্ষ করবেন। যদি সব কিছুু স্বাভাবিক থাকে তাহলে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব।
হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা: আজিজুল গফুর জানান, প্রসব বেদনার সময় ব্যথানাশক একটি ইঞ্জেকশন দেয়া হয়। এরপর গর্ভস্থ সন্তান ও মাকে ক্লোজ মনিটরিং করা হয়। জটিলতা না হলে এভাবেই নরমালভাবেই সন্তান ডেলিভারি হয়।
হাসপাতালের সিনিয়র মেট্রোন আফরোজা বানু বলেন, প্রতি বছর এই হাসপাতালে যত সংখ্যক গর্ভবতী মা ভর্তি হন তার মধ্যে শতকরা আশি ভাগ ক্ষেত্রেই তারা নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। এই সংখ্যা ২০১৬ সালে চার হাজার ৯৬ এবং ২০১৮ সালে চার হাজার ২৩০ জন। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সৌদি আরব ও জর্দানে নার্সিং পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আফরোজা বানুর। তিনি জানান, আদ্-দ্বীনে তারা মাসে ৪৫০ থেকে ৫০০ প্রসূতির নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। যেসব রোগী আমাদের তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণে থাকেন তাদের বেশির ভাগই নরমাল ডেলিভারি হয়। কিন্তু জটিলতা হয় রেফারড রোগীদের নিয়ে। তারা আসেনই অনেকটা জটিলতা নিয়ে। সম্প্রতি চালু হওয়া নরমাল ডেলিভারি সাপোর্ট কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, অনেক প্রসূতি আছেন যারা ‘প্রসবকালীন পেইন’ সহ্য করতে রাজি নন। নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকলেও তারা সিজারিয়ানের জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তাদের জন্যই এই ব্যথামুক্ত ডেলিভারির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগে রোগীর ডেলিভারি যেমন স্বাভাবিক হবে ঠিক তেমনি তিনি কোনো ব্যথাও অনুভব করবেন না। এক সপ্তাহে এ রকম তিনটি কেস সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তারা সবাই এখন সুস্থ আছেন। বিজ্ঞপ্তি।


আরো সংবাদ



premium cement