১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আরিয়ানের পক্ষে আদালতে যে যুক্তি দিলো আইনজীবী

আরিয়ানের পক্ষে আদালতে যে যুক্তি দিলো আইনজীবী - ছবি : সংগৃহীত

আরিয়ান খানকে বৃহস্পতিবার ফের আদালতে পেশ করা হয়। ছেলের শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন শাহরুখ খান। এদিন আদালতে এনসিবি দাবি করে আরিয়ানের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে তারা, যা এই মাদক মামলায় নতুন মোড় এনেছে।

এরই মধ্যে এনসিবি এই মামলায় গ্রেফতার করেছে ১৭ জনকে। আরিয়ানের থেকে পাওয়া তথ্য থেকেই সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয় অচিত কুমারকে। এ ছাড়া এনসিবির পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, আগামী দিনে আরো কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেখান থেকে যাদের গ্রেফতার করা হবে, তাদের সাথে আরিয়ানকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা জরুরি। এই কারণেই আরো চার দিন; অর্থাৎ, আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত আরিয়ানের হেফাজতের আবেদন করে এনসিবি। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করেন আদালত। একই সাথে আরিয়ানকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

অন্যদিকে এদিন ফের আরিয়ানের জামিনের আবেদন জানায় তার আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে। আদালতে তিনি বলেন, প্রথম দিনের পর থেকে আরিয়ানের কাছ থেকে আর কোনো তথ্য পায়নি এনসিবি। যদি অচিত কুমারের সাথে আরিয়ানের সম্পর্ক থাকে, তাহলে কেন এ বিষয়ে তাকে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি এখনো।

এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে ওই পার্টির আয়োজকদের। তাদের সাথে আরিয়ানের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিল প্রতীক গাবা নামে আরিয়ানের এক বন্ধু। তারা জানিয়েছে, ওই পার্টিতে উপস্থিত ছিল প্রায় ১৩০০ জন। এর মধ্যে থেকে আটক করা হয়েছে মাত্র ১৭ জনকে। সেখানে আরিয়ান একজন অতিথি ছিলেন মাত্র।
পার্টির গ্ল্যামার বাড়াতেই তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রতীকই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আরাবাজকে। শনিবার যখন এনসিবি কর্মকর্তারা তল্লাশি চালায়, তখন আরিয়ানের কাছে কোনো মাদকই পাননি কর্মকর্তারা। এমনকি আরিয়ান আগেই জানিয়েছেন, আরবাজের সাথে তিনি পার্টিতে যাননি। তবে আরিয়ান কখনো অস্বীকার করেননি যে, আরবাজ তার বন্ধু। অচিতের বিষয়ে যদি আরিয়ানকে জেরা করতে চায় এনসিবি, তাহলে জামিনের পরও যেকোনো সময় এনসিবি সেই জেরা করতে পারে তাকে। এর জন্য কেন তাকে বারবার হেফাজতে নেয়া হচ্ছে, বলে প্রশ্ন তুলেছেন আরিয়ানের আইনজীবী সতীশ মানশিণ্ডে।

আরবাজের সাথেই এই মামলায় নাম জড়িয়েছে অচিত কুমারের। আজ অচিতকেও আগামী চার দিনের হেফাজতে রাখার আবেদন জানায় এনসিবি। আদালতে এনসিবির কর্মকর্তারা জানান, অচিত মাদক নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য। তাকে জেরা করে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। অচিতের আইনজীবীর অভিযোগ, এনসিবির অফিসার মিথ্যা কথা বলছেন। অচিতের কাছ থেকে মাত্র ২ দশমিক ৬ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। তাকে কবে আটক করা হয়েছে—সে কথা আদালতকে জানানোর অনুরোধ করেন অচিতের আইনজীবী। এমনকি এনসিবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দেন অচিতের আইনজীবী। এদিন আদালতে তিনি বলেন, মাদক ক্রেতারা এই চক্রের শিকার, তারা শিকড় নয়।

মাদককাণ্ডে ভারতের কেন্দ্রীয় মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) হাতে গত রোববার গ্রেফতার হন শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খান। এর পর সময় যত গড়িয়েছে, বিতর্ক ততই বেড়েছে। আরিয়ান খান এবং এই মামলায় গ্রেফতার আরিয়ানের বন্ধু আরবাজ মার্চেন্ট ও মুনমুন ধামেচার এনসিবি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এই প্রেক্ষাপটে তাদের বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয়। সাথে এই মামলায় গ্রেফতার অন্য পাঁচ অভিযুক্তকেও এদিন আদালতে তোলে এনসিবি।

বৃহস্পতিবার ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় আরিয়ান খানকে নিয়ে আদালতে পৌঁছায় এনসিবি দল। শাহরুখ-পুত্রের পরনে এ সময় ছিল কালো টি-শার্ট ও জিনস, মুখ ঢাকা ছিল মাস্কে, আর মাথায় ছিল সাদা টুপি।

টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘লাইভ ল’-এর মাধ্যমে মামলার শুনানি সম্পর্কে জানা যায়। শুনানিতে আরিয়ানের আইনজীবী মানশিন্ডে বলেন, ‘নতুন একজনকে এনে আমার মক্কেলকে আবারো ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি তিনি আমার মক্কেলের ড্রাগ ডিলার হন এবং তাকে ৫ তারিখে গ্রেফতার করা হয়, তো এই দুদিনেই জিজ্ঞাসাবাদ করে আমার মক্কেল ও তার সংযোগ বের করা যেত। দুদিন গ্রেফতার করে বসিয়ে রাখার কী যুক্তি?’

আরিয়ানকে হেফাজতে রাখার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘আমার মক্কেল তার যা বলার স্টেটমেন্ট দিয়ে এসেছেন। এখন প্রতি শুনানিতে নতুন কোনো ব্যক্তিকে হাজির করে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে আমার মক্কেলকে হেফাজতে রাখার কোনো ভিত্তি নেই। আমার মক্কেল প্রতীক গাবার মাধ্যমে এই জাহাজে আমন্ত্রিত হন। তাকে বলা হয়, তাকে ভিআইপি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হচ্ছে, যাতে পার্টিতে অতিরিক্ত গ্ল্যামার আসে। সেখানে (জাহাজে) আর কারওর সাথে আমার মক্কেলের সম্পর্ক নেই। ড্রাগ পার্টি হবে প্রতীক এমন কিছুই জানায়নি আরিয়ানকে। এমন কোনো মেসেজ বা কল রেকর্ডও নেই। আরবাজকেও প্রতীক আলাদাভাবে আমন্ত্রণ করেছেন। আরবাজ বা আরিয়ান একসাথে সেখানে যাননি। যেহেতু স্পটে গিয়ে দেখা হয় ও একে অন্যের পরিচিত, তাই একসাথে কথা বলতে বলতে তারা দুজন এন্ট্রি করেছিলেন।’

আরিয়ানের কাছ থেকে কিছু পাওয়া যায়নি দাবি করে তার আইনজীবী শুনানিতে বলেন, ‘আমার মক্কেলকে দুবার চেক করা হয়েছে। তার থেকে কিছু পাওয়া যায়নি। তারপর তার ফোন জব্দ করা হয় এবং কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে আসেন। আমার মক্কেল আরবাজের সাথে বন্ধুত্বের কথা অস্বীকার করছেন না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তার কাছে পাওয়া ড্রাগের দায় আমার মক্কেল নেবেন। আর আপনারা নতুন যে বা যাকেই তদন্তের খাতিরে আনেন। দরকার পড়লে আমার মক্কেলকে এনসিবিতে ডাকবেন জিজ্ঞাসাবাদের দরকার পড়লে। কিন্তু তাই বলে তাকেও কাস্টোডিতে থাকতে হবে—এমন কথা নেই। সেই শুরু থেকে আমার মক্কেলের কাছ থেকে কিছু না পাওয়া সত্ত্বেও অনেকটা ষড়যন্ত্র করে তাকে হেফাজতে রাখা হয়েছে। আমার ৩৯ বছরের ক্যারিয়ারে আমি জীবনেও দেখিনি, প্রধান আসামিকে এত সহজে তদন্ত কমিটি ধরে ফেলেছে। তো প্রধান আসামিকে ধরতে আমার মক্কেলকে আজীবন বন্দী করে রাখা তো সম্ভব নয়। তার থেকে যখন যা জিজ্ঞাসার জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে।’

মানশিন্ডে বলেন, ‘অ্যাকিউজড ও ড্রাগ পাওয়া গেছে—এমন ব্যক্তিরা আমার মক্কেলের পরিচিত, মানে এই না যে, আমার মক্কেলও জড়িত বা সে ড্রাগ কিনেছে বা গ্রহণ করেছে। আমিও আমার বিজ্ঞ প্রতিপক্ষের উকিলকে চিনি। এর মানে এই না যে, কোর্টে তাঁর কাছে আর্মস-ড্রাগ পাওয়া গেলে আমিও তাতে জড়িত হব।’


আরো সংবাদ



premium cement