২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
পরিচালক সমিতির নির্বাচন ২০২১-২২

ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে নির্মাতারা, শুক্রবার ভোট

ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে নির্মাতারা, শুক্রবার ভোট - ছবি : সংগৃহীত

রাত পোহালেই চলচ্চিত্র পরিচালকদের নির্বাচন। ২ এপ্রিল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিএফডিতে চলবে ২০২১-২২ মেয়াদের নতুন কমিটি বাছাইয়ের ভোট গ্রহণ। করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ভোটার ছাড়া এদিনে অন্য কেউ বিএফডিসি প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে পারবেন না। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিটি বিষয়টি সংশ্লিষ্ঠ সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে।

অন্যবারের চেয়ে এবারের নির্বাচন আলোচনায় এসেছে অন্য আরেকটি কারণে। দীর্ঘ দিন ধরে চলচ্চিত্র পাড়ায় মূল ধারার পরিচালক আর টেলিভিশন থেকে যাওয়া পরিচালকদের মধ্যে একধরণের মৌণ দ্বন্দ্ব ছিল। এবার সেই দ্বন্দ্ব ঘুছে যাওয়ার ঈঙ্গিত পাওয়া গেছে প্রার্থীদের তিনটি প্যানেল দেখে। যেখানে রয়েছেন সোহানুর রহমান সোহান-শাহীন সুমন, কাজী হায়াৎ-এস এ হক অলিক এবং শাহ্ আলম কিরণ-সাফি উদ্দিন সাফি প্যানেল। যার প্রতিটিতেই রয়েছেন টিভি ঘরানার তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। আবার শেষদিকে এসে নির্বাচনকে ঘিরে কিছুটা বিবর্ণতাও চলে এসেছে। কারণ করোনা প্রকোপ ফের বাড়ছে। করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ প্রকটভাবে আসায় পরিবর্তন আনা হয়েছে নির্বাচনী রীতিতে। বিষয়টি নিয়ে ৩০ মার্চ বিকালে কমিশনসহ তিন প্যানেলের প্রার্থীরা বসেছিলেন। এতে জানানো হয়, নির্বাচনের দিন এফডিসির মূল ফটক থাকবে বন্ধ। ভোটার কার্ডধারীরাই শুধু ঢুকতে পারবেন এফডিসিতে। বৈঠক শেষে সদ্য সমাপ্ত হওয়া কমিটির সভাপতি বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘ভোটের দিন কেউ প্রচারণা চালাতে পারবে না। নির্বাচনের দিন কোনো প্রার্থী ভোট চাইতে পারবেন না, এমনকি ভোটারের কাছে ঘেঁষতে পারবেন না। কোলাকুলি ও করমর্দন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ভোটাররা ভোট দেয়ার পরপরই এলাকা ত্যাগ করবেন। আর ভোটার ছাড়া কেউ-ই ঢুকতে পারবেন না। এগুলো কঠিনভাবে মানা হবে। নাইলে মুরব্বীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

এ তো গেলো করোনার বিধিনিষেধ। কেমন চলছে এবারের নির্বাচন প্রচারণা। বিশেষ করে বিকল্পধারা আর মূলধারার পরিচালকের ব্যবধান এবার ঘুচে গেছে। এবারের নির্বাচনে সম্পূর্ণ নতুন প্রার্থী হয়েছেন দীপংকর দীপন, নোমান রবিন, মুরাদ পারভেজ, রফিক সিকদার, ডা. বুলবুল বিশ্বাস, মনিরুল ইসলাম সোহেল, সাইফ চন্দন ও মাসুমা তানি। প্যানেলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এস এ হক অলিকের মতো টিভি নির্মাতাও। তবে প্রচারণা ও ব্যক্তিগত কাজের কারণে আলোচনায় আছেন নতুনরাই। বিষয়টি নিয়ে সোহান-শাহীন প্যানেলের আন্তর্জাতিক ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব প্রার্থী নোমান রবিন বলেন, ‘বৈরিভাব আগে হয়তো কেউ কেউ দেখাতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে সিনেমা হলে আমাদের যে প্রভাব, তারা হয়তো এখন বুঝতে পেরেছেন দূরে থেকে লাভ নেই। কাছাকাছি থাকলে সবার মঙ্গল। নির্বাচনে এবার আমাদেরই তারকা প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। যারা অনেক সিনিয়র, সৃজনশীল- তাদের সাথে একটা গ্যাপ ছিল। সেটা ঘুচে গেছে। তারাই আমাদের ওয়েলকাম জানাচ্ছেন। এটা চলচ্চিত্রের জন্য পজিটিভ দিক।’

কাজী হায়াৎ-এস এ হক অলিকের প্যানেলে একই পদের প্রার্থী নির্মাতা মুরাদ পারভেজ বৈরিতাকে টানলেন না। বললেন, ‘আমি যখন প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করি, তখন থেকেই সবার সহযোগিতা পেয়েছি। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা যে নাই, তা নয়। সময় বদলাচ্ছে, দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে, সবাই উদার হচ্ছে। দেখুন এবারের নির্বাচনে চারজন একেবারে সরাসরি টেলিভিশন থেকে এসে অংশ নিচ্ছেন। আমরা এসেই তো প্যানেল গঠন করতে পারব না। তারাই তো ডেকেছেন। আমাদের সবারই একসাথে কাজ করতে হবে।’

শাহ্ আলম কিরণ-সাফি উদ্দিন সাফি প্যানেলের সাংগঠনিক সচিব প্রার্থী হিসেবে আছেন সাইফ চন্দন। তিনিও প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার ভাষ্য, ‘যারা গাড়ি চালায় তারাই কিন্তু ভালো বুঝবে গাড়ির অবস্থা। এখন প্রচুর তরুণ নির্মাতা সিনেমা তৈরি করছেন। মূলত তারাই এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই জায়গা থেকে সিনেমার ভালোমন্দ তুলে ধরতে ও সমাধানে আমি কাজ করে যেতে চাই। ঠিক এ কারণেই নির্বাচনে আসা।’

এবারের নির্বাচনে ১৯টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪২ জন। সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৩৬১। যার মধ্যে ৯১ জন আছেন টেলিভিশন নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস গিল্ড’র সদস্য। যাদের নিয়েই হচ্ছে ভোটের জয়-পরাজয়ের মূল হিসাব-নিকাশ।

টিভি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নির্বাচনে আছেন দীপংকর দীপনও। বর্তমান সময়ের ব্যস্ততম এই পরিচালক বললেন, ‘করোনার এই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। চলচ্চিত্র আগে থেকেই নাজুক অবস্থায় ছিল। এখন যদি আমরা সম্মিলিতভাবে স্টেপ না নিই তাহলে আর এটিকে বাঁচানো যাবে না। বিশ্বে আজ ১৯২টি দেশ; কিন্তু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আছে কয়টি দেশের? বড়জোর ৪০টা। তাদের মধ্যে আমাদের একটি। তাই এটি বাঁচাতে সাংগঠনিকভাবে কাজ করতে চাই। তবেই আমরা এই ক্রান্তিকাল থেকে বের হয়ে আসতে পারব।’


আরো সংবাদ



premium cement

সকল