২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হল খোলার পর বেড়েছে সমালোচনা

হল খোলার পর বেড়েছে সমালোচনা - ছবি : সংগৃহীত

টানা সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুলেছে। কিন্তু ভালো সিনেমা ছাড়া হল খোলায় বেড়েছে সমালোচনা। লগ্নির টাকা উঠে না আসার অজুহাত দিয়ে নতুন ছবি মুক্তি দেয়নি অনেক প্রয়োজক। অথচ সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া ২২টি সিনেমা ছিল মুক্তির তালিকায়। এদিকে দেশে শতাধিক প্রেক্ষাগৃহ আগে থেকে প্রস্তুতি নিলেও ভালো সিনেমার অভাবে খোলেনি। হল মালিকদের তথ্য অনুযায়ী সরকারি ঘোষণা মেনে গত শুক্রবার থেকে সারা দেশে ৬৬টি প্রেক্ষাগৃহ ছবি চালানো শুরু করেছে। এরমধ্যে ৩৯টি প্রেক্ষাগৃহে নানা কারণে সমালোচিত ‘হিরো আলম’র ছবি আর বাকি হলগুলোতে শাকিব খানের পুরনো ছবি চালানো হচ্ছে।

চলচ্চিত্র সমালোচকরা বলছেন, অনেক দিন ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শক কমছে। মানহীন গল্পের করণে দেশের অনেক দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া আকাশ সংস্কৃতিও সিনেমার বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এই অবস্থায় করোনার হানা অবস্থা আরো নাজুক করেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমাদের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ঠদের উচিত ছিল এই অবস্থাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর। করোনার কারণে দর্শকদের রুচি বোঝার একটি সুযোগ তৈরী হয়েছিল। সে অনুযায়ী ভালো সিনেমা দিয়ে দর্শকদের হলে ফেরানোর একটা চেষ্টা চাইলেই তারা করতে পারতেন। অথচ ১৬ অক্টোবর দর্শকদের সাথে প্রহসন করা হয়েছে হিরো আলমের মতো সমালোচিত ব্যক্তির ছবি ৩৯টি হলে মুক্তি দিয়ে।

একাধিক গণমাধ্যমে স্বাক্ষাতকারে ওই অভিনেতা বলেছেন, দুঃসময়ে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে এগিয়ে এসছেন তিনি। দেশের চলচ্চিত্রের জন্য এতো বড় উপকার করতে পারায় আর কোনো দুঃখ নেই তার।

দেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মতিন রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের চলচ্চিত্রের দায়িত্বশীলদের উদাসিনতার সুযোগেই নাম সর্বস্ব ব্যক্তিও দুঃসময়ের ত্রাতা সাজতে চেষ্টা করেন। এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেও আমার বিরক্ত লাগছে। ২২টি সিনেমা আমাদের হাতে ছিল একজন পরিচালকও কেন সাহস করে এগিয়ে এলেন না সেটাই আমার প্রশ্ন? তারা কি পরে সিনেমা মুক্তি দিয়ে বেশি ব্যবসা করবেন? আমার তো মনে হয় না তারা সেটা পারবেন। এখন একটা নতুন ছবি মুক্তি দিয়ে টানা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চালানোর সুযোগ আছে। পরে কিন্তু প্রতিযোগিতার কারণে সেই সুযোগ আর থাকবে না।

মতিন রহমান বলেন, করোনার পরপর যদি ভালো বার্তা দর্শকদের কাছে না পৌঁছানো যায়; তাহলে কিন্তু তারা আর কোনো দিন হলমুখী হবে না। এখন সময়টা ডিজিটাল। মানুষ কোনো কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আর সেদিকে তাকায় না। আমাদের সে দিকটা খেয়াল রাখতে হবে।

এদিকে শুক্রবার হল খোলার দিন রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ সিনেমা হলই বন্ধ। বলাকা, মধুমিতা, জোনাকি, এশিয়া, স্টার সিনেপ্লেক্স, শ্যামলী সিনেপ্লেক্সের মতো জনপ্রিয় হলগুলোর সামনে ঝুলছে বন্ধের নোটিশ, মূল ফটকে তালা। তবে ফার্মগেটের ছন্দ-আনন্দ, ইংলিশ রোডের চিত্রামহল এবং ডেমরার রানিমহল খুলেছে। হলগুলোতে চলছে সমালোচিত নতুন ছবি ‘সাহসী হিরো আলম’।

শুধু রাজধানী নয়, সূত্রের মাধ্যমে খোঁজ মিলেছে, গোটা দেশের চিত্র একই।

জানা গেছে, ঢাকাসহ সারাদেশে যে ৬৬টি হল খুলেছে তার সবকটাতেই দর্শক উপস্থিতি ছিল অনুল্লেখযোগ্য।

প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের বক্তব্যে মিলেছে এমন চিত্রের যৌক্তিকতা। তিনি বলেন, ‘ভালো ছবি না আসলে হল খুলবো না। যেসব ছবির কোনো কোয়ালিটি নেই সেসব চালাতে চাই না। এতে লাভ তো দূরে থাক, খরচের টাকা ওঠে না। প্রয়োজনে বাইরে থেকে ছবি আনবো, তবু মানহীন কিছু চালাবো না।’

এদিকে রাজধানীর অভিজাত দুই মাল্টিপ্লেক্সের মধ্যে যমুনা ব্লকবাস্টারের অর্ধেক খুলেছে। তাদের সাতটি স্ক্রিনের মধ্যে তিনটিতে ছবি চলছে। দর্শক বাড়লে বাকিগুলোও খুলে দেয়ার পরিকল্পনা আছে সংশ্লিষ্টদের।

অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় চেইন মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্সের সবক’টি হল বন্ধ রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে আমাদের কর্মীরা অনেকে ঢাকার বাইরে আছেন। দুই একদিনের মধ্যে ঢাকায় ফিরলেও তাদের করোনা টেস্ট করা এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে কোয়ারেন্টিনে রাখাসহ স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য দুই সপ্তাহ সময় লাগছে। সে হিসেবে ২৩ অক্টোবর থেকে আমরা সব শাখা একসাথে খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে এটুকু নিশ্চিত, নতুন ও ভালো মানের সিনেমা না এলে সিনেমা হলগুলো সহসা খোলা হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement