এখনো দুর্ঘটনাস্থলে থমকে দাঁড়ায় পথিক
- এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
- ১১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪০, আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪২
আজ ১১ জুলাই। শোকাবহ মিরসরাই ট্র্যাজেডির এক যুগ আজ। ক্যালেন্ডারের পাতার সব দিবস ভোলা গেলেও মিরসরাইয়ের ১১ জুলাই ট্র্যাজেডি মনে দাগ কেটে থাকার মতো। সন্তানদের জন্মদিন অনেকে ব্যস্ততায় ভুলে যায়, কিন্তু ভুলতে পারে না মৃত্যুর দিন। আর ওই মৃত্যু যদি ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়, তা আরো বেদনাদায়ক। এখনো যাওয়া আসার পথে দুর্ঘটনাস্থানে থমকে দাঁড়ায় পথিক।
আজ থেকে ১৩ বছর আগে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নেয় এক অভিভাবক ও ফুটবলপ্রেমীসহ ৪৫ শিক্ষার্থীর। ২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা শেষে একটি ট্রাকে করে আবুতোরাবে ফিরছিল তারা। পথে মায়ানী ইউনিয়নের পশ্চিম সৈদালীতে শিক্ষার্থীদের বহনকারী মিনি ট্রাকটি উল্টে ডোবায় পড়ে যায়। এতে একে একে মৃত্যু হয় ৪৫ জনের।
ওই দিনের দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়ায় তাদের সহপাঠী ও স্বজনরা। মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ এবং দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’।
মিরসরাই ট্র্যাজেডি এক বিভীষিকার গল্পের নাম। একে একে ৪৫টি জীবনের কঠিন নিয়তির গল্প। ৪৫টি পরিবারের সারাজীবনের অশ্রুপাতের গল্প। চালকের সামান্য ভুলে এতগুলো খেলাপাগল শিশু-কিশোর নিয়ে মিনি ট্রাকটি সোজা গিয়ে উল্টে পড়ে পাশের ডোবায়। মুহূর্তেই হইচই পড়ে যায় ঘটনাস্থলে। আশপাশের সবাই ছুটে এলো ঠিকই, কিন্তু বাঁচানো গেল না মিনি ট্রাকের তলানিতে আটকে পড়া কোনো খুদে ছাত্রকে। একে একে নিষ্প্রাণ হলো ৪৫টি তাজা জীবন।
ওই সময় নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরু দোজা চৌধুরী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতারাসহ দেশের বিশিষ্টজনরা।
এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে উঠলে আঁতকে উঠে নিহতদের স্বজনরা। এখনো যাওয়া-আসার পথে দুর্ঘটনাস্থলে থমকে দাঁড়ায় পথিক। প্রতিবছরের মতো এবারো নিহতদের স্বরণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আবুতোরাব বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।
আবুতোরার বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বাবুল জানান, মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মরণে বৃহস্পতিবার সকালে কোরআন খতম, ১১টায় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ এবং ‘অন্তিম’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাড়ে ১১টায় শোক সভা ও বাদ যোহর দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচিতে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
তিনি আরো জানান, মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নিহত হওয়া আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা, জাতীয়ভাবে মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবস পালনসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা