১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জামিয়া পটিয়ার ৩ ছাত্রকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ মহাপরিচালকের

জামিয়া পটিয়ার ৩ ছাত্রকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ মহাপরিচালকের - ছবি : নয়া দিগন্ত

বিগত কয়েক দিনের ব্যবধানে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার তিনজন নিরীহ ও নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে। বিনা কারণে মাদরাসাছাত্রদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অনতিবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি আবু তাহের কাসেমী নদভী।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ প্রতিবাদ জানান।

তিনি বলেন, গত ঈদুল আজহার ছুটিতে জামিয়া পটিয়ার জামাতে চাহারুমের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ওজাইর (বাবা: ইদ্রিস আলী, সোনাগাজী, ফেনী) এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশরাফুল ইসলাম হামিম (বাবা: নুরুল আলম, সোনাগাজী, ফেনী) ঢাকার সাইনবোর্ড জামিয়াতু ইব্রাহিমের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হস্তলিপি প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে তারা দুজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। পরিবার থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিন দিন পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি। তাদেরকে গুম করে রাখা হয়। দুজনের মধ্যে আশরাফুল ইসলাম হামিমকে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে তার বাড়ির পাশে রেখে যায়। আর ওজাইরকে কক্সবাজারে নিয়ে গিয়ে জঙ্গি সাজিয়ে গ্রেফতার দেখায় র‌্যাব। জামাতে চাহারুমের আরেকজন ছাত্র মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ তার বাড়ি ভোলা জেলায়। সে ভোলার বাড়ি থেকে মাদরাসায় আসার পথে লক্ষীপুর থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাব।‌ ইতোপূর্বে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আরেকজন ছাত্র মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে জামিয়ার পাশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পর তাকেও একইভাবে জঙ্গি বলে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

বিবৃতিতে জামিয়া প্রধান বলেন, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশে-বিদেশে জামিয়া পটিয়ার বহুমুখী খেদমাত রয়েছে। যার সুনাম ও সুখ্যাতি বিশ্বব্যাপী। জামিয়া কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক মণ্ডলী ও তালিবে ইলমরা দ্বীনদরদী ও দেশ প্রেমিক। তাদের সাথে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আটককৃত তিন ছাত্র আমাদের জানামতে কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিলনা। তাদের স্বভাব-চরিত্রও ভালো। জামিয়ায় অবস্থানকালে তারা প্রচলিত রাজনৈতিক কোনো দল, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তারা কোনো ধরনের জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত নয়। জঙ্গীবাদের সাথে তাদের কোনো সম্পর্কও নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি যে, প্রশাসনের অভ্যন্তরে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বিরোধী একটি গোষ্ঠী নতুন করে জঙ্গী নাটক সাজিয়ে ইসলামী শিক্ষার বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা মাদরাসা শিক্ষা, আলেম-ওলামা ও তালিবে ইলমদের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে ‘কখনো কওমি মাদরাসায় জঙ্গী তৈরি হয়নি, হতেও পারে না’। বারবার এ জাতীয় বক্তব্য দেয়ার পরেও কওমি মাদরাসার কোনো ছাত্র সম্পর্কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ আনা দূরভিসন্ধিমূলক এবং দায়িত্বহীন কাজ। আমাদের কোনো ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমাদের জানান। আমাদের না জানিয়ে তুলে নিয়ে গুম রেখে জঙ্গি সাজানো বেআইনি কাজ এবং জঘন্য অপরাধ’।

আল্লামা আবু তাহের নদভী আরো বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি পরিকল্পিতভাবে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সুনাম নষ্ট করা এবং জামিয়ার নিরপরাধ ছাত্রদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করে তাদের জীবন ধ্বংস করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। আমরা অনতিবিলম্বে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং ভবিষ্যতে এমন দায়িত্বহীন কাজ থেকে বিরত থাকতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement