১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিয়ের প্রলোভনে শারিরীক সম্পর্কের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

বিয়ের প্রলোভনে শারিরীক সম্পর্কের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে - নয়া দিগন্ত

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল হাসান বিজয়ের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে শারিরীক সম্পর্কের অভিযোগ তুলেছেন সাদিয়া খান আদরী নামের খুলনার এক মেয়ে। আদরী নিজেকে টিকটকার অভিনয় শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ফেনীর একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

এই ঘটনা সোনাগাজীসহ ফেনী জেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে আলোচনা-সমালোচনার শুরু হলে ইকবাল হাসান বিজয়কে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে উপজেলা ছাত্রলীগ।

ঢাকায় বসবাসরত খুলনার খালিসপুর রায়ের মহল আব্দুল মালেক রোডের খান হারুন উর রশিদের মেয়ে সাদিয়া খান আদরী অভিযোগ করেন, কক্সবাজার শুটিং করতে গিয়ে গত আট মাস আগে ফেনীর সোনাগাজীর চরচান্দিয়া গ্রামের আব্দুল্লা আল মামুনের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হাসান বিজয়ের সাথে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্ক এবং বিজয় বিয়ের প্রলোভন দেয়ায় ফেনীতে এসেও তার বোনের বাসায় বিভিন্ন সময় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান তারা। তার পরিবারসহ সবাই জানে যে বিজয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। এ অবস্থায় বিজয়কে আদরী বিয়ের কথা বললে তিনি কালক্ষেপণ করতে থাকেন।

সাদিয়া খান আদরী বলেন, ‘আমার সব মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। এ অবস্থায় আমি গত ২৮ এপ্রিল বিয়ের দাবিতে ঢাকা থেকে সোনাগাজীতে এসে বিজয়ের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলনের সহযোগিতা চাইলে তিনি আমাকে তিনজন গ্রাম পুলিশসহ বিজয়ের বাড়িতে পাঠায়। কিন্তু বিজয় আবারো ওই দিন আমার সাথে চলচাতুরী করে প্রতারণার মাধ্যেমে আমাকে হয়রানি করে আমার সাথে বিমাতা সুলভ আচারণ করে। আমাকে প্রতারিত করে ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলনের বিরুদ্ধে জোর করে ভিডিও রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে ছেড়ে দেয় এবং আমাকে সহযোগিতাকারী চেয়ারম্যান মিলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা তৈরি করে। যা আমি তখন বলতে না পারায় আজ বিষয়টি আপনাদের জানাতে এসেছি। আমি আমার স্ত্রীর অধিকার আদায় করে তার সাথে সংসার করতে চাই। আমি তাকে ছাড় দিচ্ছি, কিন্তু ছেড়ে দেবো না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করব। তাতেও কাজ না হলে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। তবুও আমি আমার অধিকার আদায় করে ছাড়ব।’

গ্রাম পুলিশ জসিম উদ্দিনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভাষ্য মতে, ওই দিন আদরীকে নিয়ে এলে বিজয় বাড়ির দরজায় এসে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের অপেক্ষা করতে বলে এবং ওদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় উৎসুক মানুষ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা বাড়ির সামনে ভীড় করে। পরে সাংবাদিকেরা তথ্য জানতে বিজয়ের বাড়ি গেলে ঘরের দরজা খুলে বের হয়ে সময় চায় বিজয়। মেহমানদের সাথে কথা সেরে সাংবাদিক ও অন্যান্যদের সাথে কথা বলবে বলে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে আদরীকে নিয়ে ফেনীর দিকে পালিয়ে যায়।

চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, ‘ওই দিন দুপুরের দিকে এক তরুণী সাথে আরো এক মেয়েকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে এসে ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয়ের সাথে সম্পর্কের কথা বলেন। তখন তারা বিজয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা চান। পরে আমি গ্রাম পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে তাদের বাড়ি পাঠিয়েছি। গ্রাম পুলিশ সদস্যরা বাইরে অবস্থানকালে বিজয় তাদের নিয়েই অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যান বলে জানতে পেরেছি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হাসান বিজয় এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এগুলো আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার হেয় করার জন্য এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা উঠে পড়ে লেগেছে।’
তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান রাসেল বলেন, ‘চরচান্দিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয়ের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ রায় বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি, থানায় অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement