তীব্র তাপপ্রবাহে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়ায় প্রকোপ
- হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
- ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:২০
প্রচণ্ড তাপে পুড়ছে গোটা দেশ। কিছুতেই কমছে না অস্বস্তিকর গরম। মাঝে মধ্যে গায়ে কিছুটা বাতাস লাগলেও তা যেন আগুনের হলকা। এ যেন গরমে হাঁসফাঁস জীবন। তীব্র এ তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোও। ত্রিপলের ছাউনিতে ঢাকা ছোট্ট ঘরে তাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই।
জানা গেছে, উখিয়ার স্থানীয়রা অনেকেই গরমে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারলেও রোহিঙ্গাদের তার কোনো সুযোগ নেই। ক্যাম্পের ভেতরে কোনো গাছপালা নেই। এছাড়াও সেখানে পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। যার ফলে নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা এই গরমে অস্বস্তিতে পড়েছে। এদিকে গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাতাসের আর্দ্রতা। ঘর থেকে বের হলেই পুড়ে যাচ্ছে শরীর। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট। জীবিকার তাগিদে বের হয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে খেটে-খাওয়া মানুষজনকে। প্রচণ্ড গরমে উখিয়ার হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বয়স্করা। ডাক্তাররা বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই সাথে বেশি বেশি পানি পান করতে বলছেন। সুতি কাপড় পরিধান করার পাশাপাশি শিশু বয়স্ক ও গর্ভবতী মায়েদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। তীব্র গরমে প্রতিদিনই গড়ে অর্ধশত শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে।
সরেজমিন উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কোটবাজার অরিয়ন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ফাহিয়া ফারহা নিশি বলেন, আজ চার দিন ধরে আমি হাসপাতালে ভর্তি। প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে অরিয়ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার মতো অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন। সর্দি-কাশি জ্বরের কারণে এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে নুর কায়দা নামে এক রোহিঙ্গা শিশুকে।
তার বাবা আব্দুল্লাহ বলেন, বৃদ্ধ মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রাম পাঠিয়েছি ছোট ভাইকে দিয়ে। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে দু’দিন ধরে অবস্থান করছি। হাসপাতালগুলোতে দিন দিন বাড়ছে রোগীর চাপ।
ডাক্তার মোহাম্মদ আয়াজ বলেন, ডায়রিয়া হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কেবল যদি অতি মাত্রায় পানি শূন্যতা হয় সেক্ষেত্রে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিলে দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ। গরমে নাস্তানাবুদ উখিয়াবাসীও। একটু স্বস্তির আশায় নদীর পাড়, সমুদ্র ও গাছতলায় ছুটছেন অনেকেই। ডাব কিংবা শরবতের দোকানে গিয়ে পিপাসা মিটানোর হিড়িক পড়েছে।
হাসান মোহাম্মদ শামীম নামে এক ব্যক্তি বলেন, গরমে অস্থির জন-জীবন। তাই একটু প্রশান্তির আশায় উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকতে এসেছি।
ওই এলাকায় গাছতলায় বসা আবুল হাসান আলী বলেন, এ গরমে ঘরে থাকাও কষ্টকর। তাই গাছতলায় বসে আছি। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। ছায়া দেয়। এই উপকারী গাছও মানুষ কেটে টুকরো টুকরো করে। আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। বেশি বেশি গাছ রোপণ করতে হবে। প্রকৃতিকে শান্ত-শীতল করতে এক পশলা বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে হা-পিত্যেশ করছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বৃষ্টির দেখা খুব একটা মিলছে না।
এছাড়া চলমান তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস জন-জীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। বৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করছে পুরো দেশ। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে উখিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বৃষ্টির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। তীব্র গরমে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা