রুমার অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তার বার্তা পেল পরিবার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৪৮, আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৫২
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা থেকে অপহৃত সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। অস্ত্রধারীদের হামলা ও ব্যাংক লুটের ঘটনায় রুমা ও থানচি উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের রুমা শাখার অপহৃত ব্যবস্থাপকের সঙ্গেস তার পরিবারের যোগাযোগ হয়েছে জানালেও পরিবার বলছে নেজাম উদ্দিনের সাথে সরাসরি তাদের কোনো কথা হয়নি।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল হক অবশ্য বলেছেন, নেজাম উদ্দিনকে যেন দ্রুত মুক্ত করা যায় সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে একদল বন্দুকধারী রুমা উপজেলা কমপ্লেক্সের মসজিদ ঘেরাও করে ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনকে তুলে নেয় এবং এরপর ব্যাংকে তাণ্ডব চালায়।
পরদিন বুধবার বন্দুকধারীরা থানচি বাজার ঘেরাও করে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দু’টি শাখা তছনছ করে এবং ব্যাংকের কাউন্টার ও উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানান থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার দুপুরেই ঢাকায় প্রেস ব্রিফিংয়ে রুমা ও থানচিতে ব্যাংকে সশস্ত্র হামলার জন্য কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে দায়ী করলেও কেএনএফ এর তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো বার্তা আসেনি।
রুমা ও থানচির ঘটনার সাথে জড়িতদের কাউকে এখনো আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেএনএফ এর সাথে পরবর্তী বৈঠক বাতিল করেছে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব গঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
অপহৃত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ : ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও পরিবার যা বলছে
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আফজাল করিম জানান, রুমা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিন ভালো আছেন বলে খবর পেয়েছেন তারা।
কীভাবে এই তথ্য পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমার সাথে সরাসরি কথা হয়নি। তবে পরিবার বার্তা পেয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। আমরাও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি যে তিনি ভালো আছেন।’
তাকে উদ্ধারের অগ্রগতি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে করিম বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও ব্যাংক একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আশা করছি দ্রুতই আপনাদের এ বিষয়ে ভালো খবর দিতে পারবো।’
যদিও অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনের স্ত্রী মাইসুরা ইসফাত বলেন, স্বামীর সাথে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো কথা হয়নি।
তিনি বলেন, তবে আমরা খবর পেয়েছি যে তিনি ভালো আছেন। আমরা চাই দ্রুত ওনাকে উদ্ধার করা হোক। সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে।’
কিন্তু নেজাম উদ্দিন সম্পর্কে কারা তাকে বার্তা দিয়েছে বা তারা আর কিছু বলেছে কি না এসব বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
অবশ্য রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেছেন ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ নিয়ে কাজ করছে।
হক বলেন,‘আমরা আশা করি খুব দ্রুতই আমরা ভালো ফল পাবো।’
রুমা ও থানচির পরিস্থিতি কেমন
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল হক বলছেন, রুমার পরিস্থিতি থমথমে হলেও পরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে এবং দোকানপাট খুলেছে।
তবে রুমা ও থানচির বাজারগুলোতে দোকানপাট খুললেও খুব একটা লোকজন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যদিও ঘটনার পর থেকেই বিজিবি ও পুলিশ টহল দিচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে রুমায় ও বুধবার থানচিতে ব্যাংকে সশস্ত্র হামলার পর বান্দরবান জেলার মোট তিনটি উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
পর্যটনের জন্য এই শহরটি পরিচিত হলেও রোজার কারণে পর্যটক কম ছিল। তার মধ্যে এই ঘটনার জেরে এলাকাটি একেবারেই পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে।
যা হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার দুপুরে
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে মঙ্গলবার রাতে রুমা উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্স ভবনে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির আগে সেখানকার মসজিদ ঘিরে ফেলেছিল ডাকাতরা।
তবে পরিষদ চত্বরে ঢোকার আগেই ডাকাতরা সেখানকার বিদ্যুতের সাব স্টেশন বন্ধ করে দেয় বলে বুধবারের ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
স্থানীয়রা বলছেন এশার নামাজের সময় মসজিদ ঘেরাওয়ের পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকেও অবস্থান নেয় তারা। ডাকাতদের ২০ জনের মতো মসজিদে প্রবেশ করে ব্যাংক ম্যানেজারকে খুঁজতে শুরু করে। এরপর অস্ত্রের মুখে মুসল্লিদের বন্দী করে সেখানে থাকা ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে যায় ব্যাংকে।
ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারের কাছে থাকা চাবি নিয়ে ভল্ট খুলার চেষ্টা করে তারা। তবে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, শেষ পর্যন্ত ভল্ট ভাঙতে না পারায় কোনো টাকা লুট করতে পারেনি সন্ত্রাসীরা।
রুমার এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ের মধ্যে বুধবার দুপুরেই সেখানে যান পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ওই সময় থানচিতেও সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় হামলার খবর পাওয়া যায়।
ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার পর সশস্ত্র ব্যক্তিরা থানচি বাজার ঘিরে ফেলে এবং এরপর অস্ত্রের মুখে লোকজনের ফোন কেড়ে নিয়ে ব্যাংকে ঢুকে পড়ে।
যদিও জানা গেছে ব্যাংকে প্রবেশ করে নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার পর কাউন্টার এবং গ্রাহকদের কাছ থেকেও টাকা নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা।
উল্লেখ্য, থানচি বাজারের সাথেই থানা ও বিজিবির ক্যাম্প ছাড়াও কাছেই সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্ট আছে।
স্থানীয়রা অবশ্য বলছে অল্প সময়ের মধ্যেই ভীতিকর অবস্থা তৈরি করে দুই ব্যাংকে হামলা করে ডাকাতদল ওই এলাকা ছেড়ে যায়।
এর মধ্যে বুধবার ভোর থেকেই অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন এবং লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা