১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জীবিত নারীকে মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ডে জালিয়াতি

‘আমি নাকি মইরা গেছি’

- ছবি : নয়া দিগন্ত

কুমিল্লার চান্দিনায় জীবিত নারীকে মৃত দেখিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড জাতিয়াতি করে অন্যের নামে প্রদানের অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে। প্রায় এক বছর ভাতা না পেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় ওই নারী।

ঘটনাটি ঘটেছে চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের জিরুআইশ গ্রামে। ভুক্তভোগী বৃদ্ধা ওই গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের স্ত্রী। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৭৬ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী।

জানা যায়, জিরুআইশ গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মজিদ ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করায় ২০১৫ সালে তার স্ত্রী খায়রন বিবি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের সহযোগিতায় এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রস্তাবিত তালিকায় বয়স্ক ভাতার আবেদন করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে খায়রন বিবি নিয়মিত ভাতা ভোগ করে আসছেন। গত ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে নতুন সদস্য মকবুল হোসেন ভুলু পাস করেন। তিনি পরিষদ যুক্ত হওয়ার পর তার কর্মী জনৈক সাদেক হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে অসহায় নারী খায়রন বিবির ভাতার কার্ডের নম্বর নিয়ে তাকে মৃত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া মৃত্যুসনদ তৈরি করেন। খায়রন বিবির ওই ভুয়া মৃত্যু সনদসহ নতুন ভাতাভোগী হিসেবে একই গ্রামের ছালেহা বেগমের নাম যুক্ত করার জন্য উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই মোতাবেক উপজেলা সমাজ সেবা দফতর খায়রুন বিবির পরিবর্তে মোসা: ছালেহা বেগমের নাম অর্ন্তুভুক্ত করে এক বছর যাবৎ ছালেহা বেগমকে ভাতা প্রদান করে আসছেন।

খায়রন বিবি জানান, ঘরের জায়াগা ছাড়া আর কোনো জায়াগ জমি নাই আমার। একটা ছেলে অন্যের কৃষি জমিতে কাজ করে। তারও দুই সন্তান। খুব কষ্টে আছি। এক বছর আগে আমাদের গ্রামের সাদেক নামের এক ছেলে ‘হেতে নাকি নেতা, আর মেম্বরের লোক’ আমরা যারা বয়স্ক ভাতা পাই সবার কার্ড নিয়ে তার (সাদেক) বাড়িতে যাইতে বলে। আমরা সবাই তার বাড়িতে গেলে সে আমাদের বই থেকে ‘কি যেন টুইক্কা (লিখে) নেয়’। ওই সাদেক আমাদের ওয়ার্ডের ভুলু মেম্বারের কথা বলে সবার কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেয়। তারপর থেকে আমার মোবাইলে আর টাকা আসে না। আমি কত মানুষের কাছে গেছি কেউ কিছু বলতে পারে না। পরে জানতে পারছি আমি নাকি মইরা গেছি!

খায়রন বিবির পুত্রবধূ খাদিজা বেগম জানান, আমার শাশুড়িকে মৃত দেখিয়ে যার নাম যুক্ত করেছে প্রকৃত পক্ষে তার বয়স পঞ্চাশও হবে না। এমন জালিয়াতি কিভাবে করতে পারে জনপ্রতিনিধিরা! আমরা অসহায় মানুষ। আমার স্বামী প্রতিদিন কাজে না গেলে ঘরে খাবার জুটে না। শাশুড়ি আম্মায় যেই টাকা পাইতো তা দিয়ে অন্তত ওনার ওষুধ-বড়ির খরচ চলতো।

এ ব্যাপারে ওয়ার্ডে মেম্বার মকবুল হোসেন ভুলু জানান, সাদেক নামের ওই ছেলেটি আমার কাছে জানিয়েছে খায়রন বিবি মারা গেছে এবং ওই সাদেকই বলেছে পাশের বাড়ির ছালেহা বেগমের নাম যুক্ত করে দিতে। আমি সাদেতের কথামতো করে দিয়েছি। অন্যের কথা এভাবে মৃত্যু সনদ দিতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওই ইউপি সদস্য।

মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ্ সেলিম প্রধান জানান, উপজেলার মধ্যে আমার ইউনিয়ন অনেক বড় ইউনিয়ন। যে কারণে সবাইকে চেনা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। আমি ওয়ার্ড মেম্বারের সুপারিশেই মৃত্যু সনদ দিয়েছি এবং নতুন ভাতাভোগীর নাম প্রস্তাব করেছি।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নাছিমা আক্তার জানান, আমার উপজেলায় অনেক ভাতাভোগী আমার পক্ষে সবার খোঁজ রাখা সম্ভব নয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের থেকে যেভাবে কাগজপত্র পেয়েছি ঠিক সেভাবেই কাজ করছি।

এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীল জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


আরো সংবাদ



premium cement