টেকনাফ স্থলবন্দরে কার্গো বোট উধাও, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ধর্মঘট

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে মালামালবাহী একটি কার্গো বোট উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ এসেছে কার্গো বোট থেকে শতাধিক বস্তা সুপারি ও অন্য আমদানি পণ্য চুরির। এ ঘটনায় বন্দরে কর্মরত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে ধর্মঘটের কারণে মিয়ানমার থেকে জলপথে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার ও জাহাজ থেকে মালামাল ওঠা-নামা বন্ধ রয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার বিকেল পর্যন্ত বন্দরে মিয়ানমার থেকে ৩৫টি মালামাল বোঝাই কার্গো বোট খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব জাহাজ ও কার্গো বোটে কোটি কোটি টাকার পচনশীল পণ্য রয়েছে।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার থেকে ৭০০ বস্তা সুপারি ও অন্য মালামাল নিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসে একটা কার্গো কার্গে বোট। সাদ্দাম হোসেন, ফারুক ও শওকত নামের তিন ব্যবসায়ী এই মালামাল নিয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালামালসহ কার্গো বোটটি বন্দরে এন্ট্রি করা হয়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতেই মালামালসহ বন্দরের ঘাট থেকে কার্গো বোটটি উধাও হয়ে যায়। শুক্রবার নাফ নদী থেকে ৫৭৪ বস্তা সুপারি ও ৮০ বস্তা বাঁধাকপিসহ কার্গো বোটটি উদ্ধার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের বিজিবি সদস্যরা মামলা দিয়ে পণ্যসহ কার্গো বোটটি টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা দেয়।

এ ঘটনাকে অন্যায় দাবি করে বন্দরের ব্যবসায়ী ও আমদানি প্রতিষ্ঠানসহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন রোববার সকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফলে বন্দর থেকে কোনো মালামাল খালাস হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে রোববার বিকেলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের নিয়ে স্থলবন্দর কতৃপক্ষের কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসে উপজেলা প্রশাসন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ৭০০ বস্তা সুপারি ও অন্য পণ্যসহ কার্গো বোট বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দরে এন্ট্রি হয়। ওই দিন রাতে কার্গো বোটটি
উধাও হয়ে যায়। পরে বিজিবি নাফ নদী থেকে ওই কার্গো বোট উদ্ধার করে। তারা অভিযোগ করেন, রাতেই ওই কার্গো বোট থেকে শতাধিক বস্তা সুপারি চুরি হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্দরে তেমন কোনো যানবাহন নেই। জেটিগুলো খালি পড়ে থাকলেও নোঙর করে রয়েছে পণ্যভর্তি কার্গো ট্রলার ও জাহাজ।

ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান, সকাল থেকে কোনো পণ্য উঠা-নামা হয়নি। এ নিয়ে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বন্দরের জেটি ঘাট থেকে মালামালসহ কার্গো বোট উধাও হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। এ ঘটনায় মিয়ানমারের আকিয়াবের ব্যবসায়ীরা পণ্য রফতানিতে শঙ্কা প্রকাশ করছে।

তিনি অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার কার্গো বোটটি উধাও হয়ে গেলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপগ্রহণ করেনি।

পণ্য আমদানিকারক সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন, টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কার্গো বোটটি উধাও হয়। কার্গো বোট থেকে শতাধিক বস্তা সুপারি ও অন্য মালামাল চুরি হয়েছে। এতে করে তিনি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বিকেলে বন্দর ভবনে বৈঠক শেষে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর ব্যবহারকারীসহ সকল পক্ষদের নিয়ে সভা হয়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে। শীঘ্রই বন্দরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

উখিয়া টেকনাফের সাবেক এমপি ও টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বদি জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর নিয়ে বিএনপি জামাতের একটা চক্র ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সম্প্রতি উঠে পড়ে লেগেছে। আগামী রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যে মূল্য বাড়ানোই এই চক্রের লক্ষ্য।

তিনি আরো জানান, বন্দরের জেটি ঘাট থেকে মালামালসহ কার্গো বোট উধাও হওয়া ও পণ্য চুরির ঘটনা রহস্যজনক। আজ বোরবার স্থল বন্দরে ধর্মঘট হওয়ায় সরকার চার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলো। তিনি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

স্থলবন্দরের শ্রমিক হেফজু রহমান বলেন, বর্তমানে স্থলবন্দরের জেটিতে বেশ কয়েকটি কার্গো ট্রলার ও জাহাজভর্তি মালামাল রয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দাবি আদায়ের জন্য রোববার সারা দিন কাজ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছে শ্রমিকেরা।

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আনসার মো: কাওসার জানান, পণ্যবাহী কার্গো বোট উধাও হওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানায় জেনারেল ডায়েরি করা হবে।

তিনি আরো জানান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ধর্মঘট নিরসনের জন্য প্রশাসনসহ সকল পক্ষদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার লুৎফর হক বলেন, রোববার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মবিরতি পালন করায় কাজ বন্ধ রয়েছে।