১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের ৫ নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা

রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের পাঁচ নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের পাহাড়ের পাঁচ নারী ফুটবলার আনাই, আনুছিং, রুপনা, ঋতুপর্ণা ও মনিকাকে রাঙ্গামাটিতে বীরোচিত সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পাহাড়ের পাঁচ নারী ফুটবলারকে ছাদ খোলা গাড়িতে রাঙ্গামাটি বিজয় মিছিল করা হয় এবং রাঙ্গামাটি স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ যৌথভাবে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, বিজিবি রাঙামাটি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো: তরিকুল ইসলাম, সদর সেনা জোন কমান্ডার লে: কর্নেল মো: আশিকুর রহমান, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী।

এ সময় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অদম্য লড়াকু খেলোয়াড়েরা, যারা আমাদের বহু কাঙ্খিত স্বপ্নকে আলিঙ্গন করেছে। ছিনিয়ে এনেছে বহুল প্রত্যাশিত বিজয়, সেই সকল স্বপ্নসারথীদের জন্য এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

এর আগে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে ঘাগড়া স্কুল থেকে তাদেরকে ছাদখোলা গাড়িতে চড়িয়ে রাঙ্গামাটি শহরে নিয়ে আসা হয়। এ সময় রাস্তাায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে স্থানীয় গ্রামবাসী খেলোয়াড়দের ফুল ছিটিয়ে উষ্ণ অর্ভথনা জানান। প্রায় দুই ঘণ্টা ছাদ খোলা বাসে চড়ে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙ্গামাটি মারী স্টেডিয়ামে এসে বিজয় মিছিল শেষ হয়।

পরে বিকেল ৫টার দিকে রাঙ্গামাটি মারী স্টেডিয়ামে বিজয়ী পাহাড়ের পাঁচ নারী ফুটবলারকে ফুল দিয়ে বীরোচিত সংবর্ধনার স্থলে বরণ করে নেয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত ও সম্প্রীতির নৃত্যের মাধ্যমে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাফ জয়ী মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণ চাকমা খেলোয়াড়দের পক্ষে বলেন, এতো বড় আয়োজন আমাদের মুগ্ধ করেছে। রাঙ্গামাটির মানুষ আমাদের এতো ভালোবাসেন তা আমরা কল্পনা করতে পারিনি। হাজার হাজার মানুষের মাঝে রেখে আমাদেরকে সংবর্ধিত করার জন্য রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ ও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ আমাদের শিক্ষক ও কোচদের কাছে। যাদের কল্যাণে আজ আমরা এই অবস্থানে ওঠে এসেছি। তারা যদি আমাদের পাশে না থাকতো তাহলে আমরা কখনোই আজ এতো বড় হতে পারতাম না।

ঋতু বলেন, পাহাড়ের প্রতিটি নারী সুযোগ পেলে তার প্রতিভা গড়ে তুলবে। ঘাগড়া স্কুলকে জাতীয়করণ করে রাঙ্গামাটিতে ফুটবল একাডেমি ও হোস্টেল গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক বলেন, বাংলাদেশের সাফ জয়ী পাঁচ নারী আমাদের গর্ব। তাদের কল্যাণে আজ বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। তাদের এই অবদানের পেছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন না করতেন তাহলে এই মেয়েরা ওঠে আসতো না।

তিনি আরো বলেন, তাদের সংবর্ধিত করতে পেরে আমরা আজ গর্বিত।

রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, পার্বত্য রাঙ্গামাটির প্রতিটি গ্রামের প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। আগামীতে প্রাথমিক স্কুলে যাতে আরো বেশী খেলাধুলা হয় তার জন্য রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ অবশ্যই কাজ করবে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য রাঙ্গামাটির অহঙ্কার দীপংকর তালুকদারের স্বদিচ্ছায় রাঙ্গামাটির হ্যাচারী এলাকায় একটি ক্রীড়া একাডেমির জন্য হোস্টেল নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই হোস্টেলে রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকার প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা এখানে থেকে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের নারীরা দেখিয়ে দিয়েছে তারা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। রুপনা চাকমা যেভাবে গোলবারকে পাহাড়া দিয়ে দেশের জন্য সোনা নিয়ে এসেছে তা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। পার্বত্য
রাঙ্গামাটির ও পার্বত্য অঞ্চলের জন্য প্রাপ্তি।

তিনি আরো বলেন, তোমাদের চলার পথ এখানে যাতে থেমে না যায়। আগামীতে বিশ্বকাপ জয় করে নিয়ে আসতে হবে।

দীপংকর তালুকদার বলেন, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা নারী, তাই নারীদের তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন নারীদের সুযোগ দিলে তারা দেশের জন্য কিছু করতে পারে।

তিনি বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলেছে। বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করাকে নিয়ে। ২০১০ সালে টুর্নামেন্টের শুরু দিয়ে আমাদের মেয়েরা ওঠে এসেছে। মেয়েরাই আজ দেশের জন্য স্বর্ণ পদক নিয়ে এসেছে। এই ধারা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, যে স্কুল লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাই ভালো করবে তাদের পৃষ্টপোষক আমরা অবশ্যই করবো। পরে খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রতিটি খেলোয়াড়রকে ৫০ হাজার টাকা এবং দু’জন কোচকে ২৫ হাজার টাকা, উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রতিটি খেলোয়াড়রকে ৫০ হাজার টাকা এবং দু’জন কোচকে ২৫ হাজার টাকা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ থেকে প্রতিটি খেলোয়াড়রকে দু’লাখ টাকা করে এবং দু’জন কোচকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিজিবি সেক্টর কমান্ডার, রাঙ্গামাটি জোন, রাঙ্গামাটি পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement