২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চলতি ডিসেম্বরে খুলছে বঙ্গবন্ধু টানেল, পরের ডিসেম্বরে প্রত্যাশিত ট্রেন যাবে কক্সবাজারে

দুই প্রকল্পে ব্যয় ২৮ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা
চলছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া অংশে উন্নয়ন কাজ। (ইনসেটে) এগিয়ে চলেছে আনোয়ারা ওয়াইজংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ। - ছবি : এস এম রহমান

চট্টগ্রামে যৌথ অর্থায়নে সরকারের গৃহীত বড় মেগা প্রকল্পের অন্যতম দুটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাল্টিলেন রোড টানেল নির্মাণ শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরে খুলে দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে দোহাজারী-ঘুনদুম রেলপথ নির্মাণ শেষে কক্সবাজারে স্বপ্নের ট্রেন যাচ্ছে পরের বছরের ডিসেম্বরে। এমনটিই আশা করছেন প্রকল্প পরিচালকরা।

এ দুটো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

মেগা প্রকল্প দুটোর কাজ শুরুতেই হানা দেয়া করোনা মহামারী ও বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল ও রেলপথ নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকদ্বয় যথাক্রমে প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী ও মফিজুর রহমান। ইতোমধ্যে টানেল প্রকল্পের কাজ ৯১ ভাগ ও রেলপথ পকল্পের কাজ ৭৫ ভাগ কাজ এগিয়েছে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালকদ্বয়।

টানেল নির্মাণে প্রকল্প সহায়তা ৫ হাজার ৯০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং সরকারের ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা রয়েছে বলে জানা গেছে।

আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম প্রান্তে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩৮৩ একর। যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু ও সড়ক মন্ত্রণালয় ও চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

২.৪৫ কিলোমিটার ও দুইপ্রান্তের তীরসহ টানেলের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩.৪ কিলোমিটার আর নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশের সংযোগ সড়কসহ এই প্রকল্পের সর্বমোট দৈর্ঘ হবে ৯.৩৩ কিলোমিটার। আর প্রতিটি টিউবের ভিতরের অংশে প্রশস্ত হচ্ছে প্রতিটি ১০.৮ মিটার করে।

আনোয়োরা প্রান্তে ৭০০ মিটারের একটি উড়াল সড়ক বা ফ্লাইওভারসহ ৫.৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের চার লেন সড়ক নির্মিত হবে, যা আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনীতে এসে চট্টগ্রাম আনোয়ারা বাঁশখালী পিএবি সড়কের সাথে মিলিত হবে অপর প্রান্তে .৫৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক মিলিত হচ্ছে নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে মূল সড়কের সাথে।

২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং একই বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন বা সম্পাদনের সময় ধরা হয়েছিল ৫ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

দোহাজারী-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমানার ঘুনদুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসছে ৪ হাজার ৯১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় দুই ভাগে প্রথম ভাগে বা লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আর দ্বিতীয় ভাগের বা লটে রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয় একই বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে।

এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে রেলপথ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে যৌথ ভাবে চায়নার দু’টি ও বাংলাদেশের দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

আগামী ডিসেম্বরে মধ্যে (যেহেতু ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে টানেল) আনোয়ারা ওয়াইজংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ৮.১ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ কাজের মধ্যে আপাতত চার লেনের কাজ সম্পন্নের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট সওজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য মাল্টিলেন রোড টানেল সংযোগ সড়কের সাথে যুক্ত হওয়া মহাসড়ক উন্নীতকরণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে এ নির্দেশ দিয়েছেন।

সোমবার ওই কাজে নিয়োজিত ন্যাশনাল ডেভলপমেনট ইনঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রজেক্ট প্রধান সৈয়দ আবদুল হান্নান বলেন, প্রকল্পের কাজের মধ্যে টি বক্স কালভার্টের মধ্যে ১৪টি গতকাল পর্যন্ত শেষ হয়েছে অপর সাতটির কাজ আংশিক শেষ হয়েছে। অপরদিকে ৮.১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অবশিষ্ট বক্স কালভার্ট ও ৩ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সওজ দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী বাবু সুমন সিংহ জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চার লেনের কাজ শেষ হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রকল্পের কাজসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৬ কিলোমিটার সড়ক প্রসস্তকরণ কাজও সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনিও।


আরো সংবাদ



premium cement