২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নিজ সম্মানীর টাকা অসহায়দের জন্য উৎসর্গ মেম্বারের

চরকাদিরা ইউপির নবনির্বাচিত সদস্য মুফতি নুরুল্লাহ - ছবি : নয়া দিগন্ত

দুঃস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুফতি নুরুল্লাহ।

মেম্বার হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম মাসের সম্মানী দুঃস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের মাঝে দান করে দিয়েছেন তিনি। আগামী ৫ বছর সরকার থেকে পাওয়া তার সকল সম্মানী ভাতা গরিবদের মাঝে বণ্টন করে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন নবনির্বাচিত এ ইউপি সদস্য।

মুফতি নুরুল্লাহ চরকাদিরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার। তার বাবা মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ একই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। পারিবারিকভাবে তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের এই চেয়ারম্যান দলটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মেম্বার নুরুল্লাহর পরিবার এলাকার সম্পদশালী পরিবারের মধ্যে অন্যতম। তাই তিনি মেম্বার হিসেবে যে ভাতা পাবেন, তা নিজের প্রয়োজনে খরচ না করে অসহায় ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করবেন বলে ঘোষণা দেন।

সাম্প্রতিক করোনা মহামারীতেও তারা সরকারের দেয়া ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে অনেকের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা আছে। কিন্তু চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ ও তার ছেলে ইউপি সদস্য মুফতি নুরুল্লাহ ব্যতিক্রম জনপ্রতিনিধি হয়ে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেছেন।

নুরুল্লাহ নিজের সম্মানী ভাতার টাকা নিজের প্রয়োজনে খরচ না করে গরিব ও অসহায় মানুষদের বিলিয়ে দেন। এভাবে তিনি মহত্ত্বের বড় উদাহরণ সৃষ্টি করলেন।

প্রথম মাসের সম্মানী ভাতা পেয়ে নুরুল্লাহ তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। তার ওই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

তাতে তিনি উল্লেখ করেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার অফিসটাইম আছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের কোনো অফিসটাইম নেই। বিশেষ করে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের। সারাদিন এমনকি রাত ২টায়ও জনতার কাজে তাদেরকে দৌড়াতে হয়।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কাবিখা থেকে শুরু করে সকল প্রকল্পের কাজ বাংলাদেশে হয় না বললেই চলে। প্রায় পুরোটাই লুট হয়ে যায়। কারণ, কেন? জবাব বহু রকমের হতে পারে, তবে সম্মানী ভাতার নামে জনপ্রতিনিধিদেরকে এভাবে অসম্মান করার দায় কি তাতে মোটেও নেই?

আপনারা হয়তো বলবেন, যারা দুর্নীতি করে, সরকারি সম্পদ চুরি করে। লাখ টাকা বেতন পেলেও তারা তা করবে। এটা ঠিক। কিন্তু যারা সৎভাবে চলতে চায়, তাদের কী হবে? সম্মানী ভাতার নামে এ অসম্মানী ভাতা তো তাদেরকেও অসৎ হতে বাধ্য করবে।

আমি আমার কথা বলছি না, হালালভাবে দু’মুঠো খেয়ে চলার মতো সচ্ছলতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের পরিষদের বহু মেম্বার এমন আছেন, যারা ইচ্ছে থাকলেও এ ‘অসম্মানী’ ভাতার কারণে সৎভাবে চলতে পারবেন না। রাষ্ট্রের কর্ণধাররা কি একটু ভেবে দেখবেন?’

মুফতি নুরুল্লাহ প্রথম মাসের ভাতা পেয়ে তা দিয়ে কয়েকটি অসচ্ছল পরিবারে মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মুফতি নুরুল্লাহ বলেন, ‘সরকার আমাদেরকে সম্মানী ভাতার নামে একটা অসম্মানী ভাতা দেয়, যা বলতেও লজ্জা লাগে। তবুও সরকার থেকে পাওয়া ভাতা আমি গরিবদের মাঝে বণ্টন করে দিবো। আমার চলার মত ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা আমাকে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের খেদমত করার জন্য এসেছি। ৫ বছর বিনা পারিশ্রমিকে জনসেবা করেই যাবো ইনশাআল্লাহ।’


আরো সংবাদ



premium cement