২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মেজর সিনহা হত্যামামলা, ম্যাজিস্ট্রেটের জবানবন্দি

মেজর সিনহা হত্যামামলা, ম্যাজিস্ট্রেটের জবানবন্দি - ছবি : সংগৃহীত

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যামামলার আসামিরা কোনো রকম ভয়ভীতি ছাড়া সুস্থ দেহে, সুস্থ মস্তিষ্কে ও দীর্ঘ সময় চিন্তা-ভাবনা করে দোষ স্বীকার করেছেন বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ।

তিনি বলেছেন, তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিগুলো যথাযথ আইনী পন্থা অনুসারে লিপিবদ্ধও করা হয়েছে।

বুধবার সকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ মামলার অন্যতম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না।

জবানবন্দি দেয়ার সময় তামান্না আরো বলেন, ‘আমি এই মামলার ৯ জন আসামিকে পৃথক পৃথকভাবে বলেছি, আমি ম্যাজিস্ট্রেট, আমি পুলিশ অফিসার নই, অর্থাৎ আমি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আসামিদের কাছে আমার পরিচয় দিয়েছি প্রকাশ্যে। আসামিদের প্রত্যেককে সতর্ক করে বলেছি, আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য নন ও স্বীকারোক্তি দিলে সেটি সাক্ষ্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে। প্রত্যেক আসামিকে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য তিন ঘণ্টা করে সময় দিয়েছি। এরপর আসামিরা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে স্বীকারোক্তি দিলে আমি তা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ এবং ৩৬৪ ধারার বিধান মতে রেকর্ড করি। আসামিরা তাদের স্বীকারোক্তিতে একাধিক স্বাক্ষর প্রদান করেন।’

তামান্না ফারাহ আরো জানান, ‘প্রতিবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার সময় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আরএমও কর্তৃক আসামিদের শারীরিক পরীক্ষার সনদ আমি দেখেছি এবং উক্ত সনদ মামলার নথিতে আছে।’

জবানবন্দির পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাকে ব্যাপক জেরা করেন। তিনি প্রত্যেক প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব দেন।

ষষ্ঠ দফায় আজ তৃতীয় দিনে সাক্ষী হিসেবে অপর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন শামীমও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।পরে তাকেও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ব্যাপক জেরার মুখোমুখি হতে হয়।

বুধবার জবানবন্দি দেয়ার জন্য ৬ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হলেও দীর্ঘ জেরার কারণে দু’জন ছাড়া অন্যদের জবানবন্দি নেয়া সম্ভব হয়নি। একটানা এ কার্যক্রম সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলার পর আদালতে দিনের কার্যক্রম শেষ হয়।

এর আগে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ তার আদালতে এ মামলার ৯ জন আসামি ও ৪ জন সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন ও প্রত্যেকের জবানবন্দি সঠিক পন্থায়, যথাযথ বিধি ও আইনী প্রক্রিয়া অবলম্বন করে হাইকোর্টের এম-৮৪ ফরমে লিপিবদ্ধ করেছেন বলে আদালতকে অবহিত করেন।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আদালতে তিনি জবানবন্দি ও জেরার জবাব দেন। প্রতিবার জেরার জবাবে এ বিষয়ে তিনি অবিচল ও অটল ছিলেন। বিকেল ৫টার পরে ৩ জন আসামি ও ২ জন সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা অপর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন শামীমও আদালতে সাক্ষ্য দেন।

ইতোপূর্বে এই দুই সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিনহা হত্যা মামলার ১৫ জন আসামির মধ্যে ১২ জন আসামি ও ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬ জন সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছিলেন।

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন শামীম ও তামান্না ফারাহ কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিম হিসাবে কর্মরত আছেন। তামান্না ফারাহ এই মামলার ৭৬ ও দেলোয়ার হোসেন ৭৭ নম্বর সাক্ষী।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, সময় স্বল্পতার কারণে বুধবার আদালতে উপস্থিত হওয়া অপর চারজন সাক্ষী তৎকালীন টেকনাফ থানায় এই মামলা রেকর্ডকারী ওসি এস দোহা, তৎকালীন ডিবি পুলিশের ওসি মানস বড়ুয়া, জব্দ তালিকার সাক্ষী পুলিশের এসআই কামাল হোসেন ও কনস্টেবল মোশাররফ হোসেনের জবানবন্দি নেয়া সম্ভব হয়নি।

আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৫ নভেম্বর থেকে পরবর্তী তিনদিন ধার্য করেছেন। বুধবার জবানবন্দি গ্রহণের সময় অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন আহমদও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, আসামিদের পক্ষে আদালতে অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার দাশ, অ্যাডভোকেট শামশুল আলম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ প্রমুখ আইনজীবী জেরা করেন।
বুধবার সকালে মামলার ১৫ জন আসামিকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

হত্যার পাঁচদিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তশেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন র‌্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement