১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নোয়াখালীতে গ্রেফতার ৪৭ জন, ১৪৪ ধারাভঙ করে চৌমুহনীতে বিক্ষোভ

- ফাইল ছবি

নোয়াখালী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে শনিবার সনাতন ধর্মাবলম্বলীরা নিহত এক ব্যক্তির লাশ সামনে রেখে ১৪৪ ধারাভঙ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এর আগে শনিবার ভোরে চৌমুহনী ইসকন মন্দিরের পুকুর থেকে সুবেল চন্দ্র সাহা নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ দিকে শুক্রবার সংঘর্ষের পর থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।

বেগমগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক আমেনা বেগম ৪৭ জন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, শুক্রবারের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শনিবার সকাল থেকে ১৪৪ ধারার কারণে চৌমুহনী বাজারের অধিকাংশ দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি মাঠে ছিল র‌্যাব, বর্ডার গার্ড-বিজিবি ও আমর্ড পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

এ দিকে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি সনাতন ধর্মের নেতাদের সাথে কথা বলে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস প্রদান করেন।

এ দিকে নোয়াখালী চৌমুহনী সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান প্রমুখ।

নোয়াখালী পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কিশোর চন্দ্র শীল জানান, সম্প্রীতি বজায় রাখতে বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল, ডিআইজি, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের আলোচনা হয়।
এ দিকে শনিবার ভোরে চৌমুহনী ইসকন মন্দিরের পুকুর থেকে সুবেল চন্দ্র সাহা (২০) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। তার বাড়ি চাটখিল উপজেলায়। তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা মিছিল বের করেন। এ সময় চৌমুহনী কলেজ রোডে পাঁচ-ছয়জন মুসলিম তরুণের ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পরলে মুসুল্লিরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে তারা চৌমুহনী কলেজ রোডসহ একাধিক পূজামণ্ডপে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ দিকে চৌমুহনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে যতন সাহা (৪২) নামের একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। তিনি কুমিল্লা জেলার গবিন্ধপুর গ্রামের মনোরঞ্চন সাহার ছেলে। তার মৃত্যুর সঠিক কারণা জানা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি আতঙ্ক হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে মুসল্লিরা মিছিল নিয়ে চৌমুহনী রেল গেটে পৌঁছালে পুলিশ, আওয়ামী লীগ-যুবলীগ একত্রিত হয়ে মুসুল্লিদের ধাওয়া করলে উভয়ের মাঝে আবারো সংঘর্ষ হয়। এ সময় চৌমুহনী বাজার রনক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি ১০ রাউন্ড গুলি ও ৬ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

এরপর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামছুন নাহার সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চৌমুহনী পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা কার্যকর থাকবে। এ সময় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তা মানেননি স্থানীয় হিন্দু ধর্মের নেতারা।


আরো সংবাদ



premium cement