২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মিরসরাইয়ে ট্রিপল মার্ডার

মা-বাবা ও ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার সাদ্দামের

নিহত বাবা নুরুল মোস্তফা (বাঁয়ে) ও ছোট ছেলে আহম্মদ হোসেন - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাড়ির চার শতক জায়গা নিয়ে ক্ষোভ থেকে মা-বাবা ও ভাইকে হত্যা করেছে সাদেক হোসেন সাদ্দাম। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সাদ্দাম। ১৫দিন আগ থেকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বুধবার রাতে নৃসংশভাবে মা-বাবা ভাইকে হত্যা করেছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধম্য সোনাপাহাড় এলাকায় এমন আলোচিত ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় বাদি হয়ে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত নুরুল মোস্তফা সওদাগরের একমাত্র মেয়ে জুলেখা। নিহতরা হলেন, স্থানীয় নতুন বাজারের মুদি ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তফা সওদাগর (৬০), তার স্ত্রী জোসনা আক্তার (৫০) ও তাদের মেজ ছেলে আহমদ হোসেন (২৫)।

এদিকে একসাথে এভাবে একঘরের তিনজনকে উপর্যপুরি চুরিকাঘাতে হত্যার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেনা এলাকাবাসী। পুরো এলাকায় শোকের পাশপাশি মানুষকে উদ্বিগ্ন দেখা গেছে। তারা আর কোথাও এমন ন্যাক্কাজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় এজন্য প্রশাসনের কাছে ঘাতক সাদ্দামের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন।

পুলিশের কাছে সাদ্দামের জবানবন্দিমূলক স্বীকারোক্তিার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকের ব্রিফিং করেছেন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মোহাম্মদ লাবিব আব্দুল্লাহ ও জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুর হোসেন মামুন।

পুলিশ জানায়, বসত বিটার ১২ শতক জায়গার মধ্যে ৪ শতক মোস্তফা লিখে দেন তার মেজ ছেলে আহম্মদ হোসেনকে। হত্যার প্রধান কারণ এটি। ১৫দিন আগে থেকে হত্যার পরিকল্পনা করে বড় ছেলে সাদেক হোসেন সাদ্দাম। এজন্য সে তার কর্মস্থল চট্টগ্রামের বায়েজিদ থেকে একটি নতুন ছুরি ক্রয় করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে বুধবার সন্ধ্যায় বাড়িতে আসে। যদিও সে চাকরী থেকে সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসতো। এরপর সে বুধবার শেষ রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথমে বাবাকে কুপিয়ে খুন করে। এরপর মা ঘুম থেকে জেগে উঠা মাত্র মাকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এরপর বিষয়টি টের পেয়ে পাশের কক্ষ থেকে দৌড়ে আসার পর ছোট ভাই আহম্মদ হোসেনকে একই কায়দায় খুন করেছেন। ৩ জনই ঘটনাস্থলে মারা গেছে। তারপর সে ঘরের ছাদে উঠে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে এলাকাবাসী তার আওয়াজ শুনে ছুটে আসে।

এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, একদম ছোটবেলা থেকে আশপাশে যাদের দেখতে দেখতে বড় হয়েছি, তাদের মধ্যে কেউ এমন নিষ্ঠুরভাবে খুন হয়ে গেলে তা কারোরই ভালো লাগার কথা না। পরিবারের বড় ছেলেটিই তার মা-বাবাকে খুন করেছে; যারা তাকে পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছিল। যে ছোট ভাইটি তাকে ভাইয়া বলে ডেকে ডেকে বড় হয়েছে, সেই আদরের ভাইটিকেও রক্তাক্ত করে খুন করা হলো। এখন পর্যন্ত সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা সংক্রান্ত পারিবারিক কলহের জের ধরে এই নিষ্ঠুর বলে শুনছি। জানি না এর পেছনে আরো কোনো কারণ থাকতে পারে কি না। তবে যত কারণই থাকুক, নিস্তব্ধ গভীর রাতে (হয়তো) ঘুমের ঘোরে মা-বাবা ও ভাইকে এভাবে খুন করা যায়!? আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের বন্ধনটা সেই কবে থেকেই নড়বড়ে। এখন এর রক্তাক্ত পরিণতি দেখতে হচ্ছে!

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম, মাহমুদ হাসান বলেন, এমন ঘটনা আগে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু আজ বাড়ির পাশে একসাথে তিনজনকে খুন করার ঘটনা দেখেছি। সম্পত্তির জন্য নিজের ছেলে কিভাবে মা-বাবা ও ভাইকে খুন করতে পারে?


আরো সংবাদ



premium cement