২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জাতীয় সংসদে নিজামুদ্দিন নদভীর বক্তব্যের প্রতিবাদ

জাতীয় সংসদে নিজামুদ্দিন নদভীর বক্তব্যের প্রতিবাদ - ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় সংসদে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভীর দেয়া বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বক্তব্য, (১) প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টির সভাপতি করা হয়েছে, (২) আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম জামায়াতের একাডেমিক ও অর্থনৈতিক রাজধানী, এবং (৩) আইআইইউসি’র দশ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অবকাঠামো নির্মাণে তার অবদান আছে- মর্মে তিনি যে অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও দূরভিসন্ধিমূলক তথ্য উপস্থাপন করেছেন, আমরা আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যগণ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) ট্রাস্ট নিবন্ধন আইনে গঠিত একটি আইনি সংস্থা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ধারা-১৫ তে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, “প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকিবে এবং উক্ত বোর্ডের সদস্যগণের মধ্য হইতে একজন সদস্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি নির্বাচিত হইবেন।” যেকোনো ব্যক্তি আবেদন করলেই সরকার কিংবা অন্যকোনো কর্তৃপক্ষ তাকে সভাপতি বানিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আইআইইউসি পরিচালনার জন্য এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ট্রাস্টই আইনসিদ্ধ একমাত্র পরিচালনা পর্ষদ যার সভাপতি আ ন ম শামশুল ইসলাম। প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বর্তমান সরকারের একজন সংসদ সদস্য হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনিভাবে একই নামে দ্বিতীয় একটি ট্রাস্ট গঠনের জনশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি পত্র ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস হতে নামের ছাড়পত্র যোগাড় করেছেন বটে কিন্তু তা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

ইতোমধ্যে চলতি বছরের ১৮ মার্চ আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি আ ন ম শামশুল ইসলাম কর্তৃক দায়ের করা রিট পিটিশনের প্রাথমিক শুনানি অন্তে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারপতিদ্বয় রুল ইস্যু করেছেন এবং প্রতিপক্ষের কেউ এফিডেভিট ইন অপজিশন দাখিল করে বলেননি যে আ ন ম শামশুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন ট্রাস্ট কোনো কারণে আইনগত কর্তৃত্ব হারিয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি কতিপয় সরকার দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে চর দখলের মতো আইআইইউসি দখল করে নিয়েছেন।

ড. আবু রেজা নদভী এমপি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উক্ত বক্তব্য পেশ করেছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে’ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের পৃষ্ঠপোষকতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমরা মনে করি, এ ধরণের বেআইনি কার্যক্রম আশ্রয়-প্রশ্রয় কিংবা বৈধতা পেলে, ভবিষ্যতে অনুরূপ আরো অপরাধের দ্বার উন্মুক্ত হবে, ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত হবে, দেশে এক ধরনের জবর-দখলনীতির সূচনা হবে। এমনতর দুর্বৃত্তায়ন দেশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় বেসরকারি/ ব্যক্তি উদ্যোগকে চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় নিপতিত
করার পাশাপাশি সরকারের ভাব-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবে।

আইআইইউসি-কে ‘জামায়াতের একাডেমিক ও অর্থনৈতিক রাজধানী’ উল্লেখ করে মূলত তিনি রাজনৈতিক কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তার অপকর্ম ঢাকার এক ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালিয়েছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স নিয়ে, আইন ও বিধিবিধানের যথার্থ অনুসরণ করেই সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনুমোদন দিয়েছে। বিগত ২৫ বছরে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা সরকারের কোনো মহল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিষয়ে কোনোরূপ অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। আইআইইউসি একটি সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস বলেই অভিভাবকগণ এখানে তাদের সন্তানদের ভর্তি করায়। বিগত ২৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজসহ সকল পর্ষদ/কর্তৃপক্ষগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা/বিধিবিধান/সার্কুলার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দিক নির্দেশনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্যাটিউটস অনুযায়ী নিয়ম নীতির মধ্যে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং আর্থিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আছে বলেই এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

আবু রেজা এমপি মহান জাতীয় সংসদের মতো একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে তার বক্তব্যে আইআইইউসি’র ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অবকাঠামো বিনির্মাণে তার অবদানের যে দাবি করেছেন তা নির্জ্জলা মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো সদস্য না হয়ে কর্মরত একজন শিক্ষকের এমন দাবি নিতান্তই হাস্যকর।

এমতাবস্তায় দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বৃহত্তর জ্ঞানচর্চার এই বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে এ ধরনের ভয়াবহ দুর্বৃত্তায়নে পৃষ্ঠপোষকতা না করার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি এবং ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী কর্তৃক জাতীয় সংসদে প্রদত্ত মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি। বিজ্ঞপ্তি।


আরো সংবাদ



premium cement