২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ২ বছর : আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চায় পরিবার

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ২ বছর : আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চায় পরিবার - ছবি : সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার।

২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

সেই থেকে প্রতিদিন ভাত খেতে গেলে মেয়ে নুসরাতের কথা মনে পড়ে মা শিরিনা আক্তারের। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় ভাত খেতে চাওয়ার পরও মেয়েকে ভাত দিতে না পারার যন্ত্রণা তাকে এখনো কাতর করে।

নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালে পানি ও ভাত না খেয়ে মারা গেছে আমার মেয়ে। ক্ষুধায় মেয়ে পানি ও ভাত খেতে চেয়েছিল। তার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে তাই ডাক্তাররা আমাকে পানি ও ভাত দিতে নিষেধ করেন। আজ আমি দুইটা বছর যখন ভাত খেতে যাই, আমার নুসরাতের কথা মনে পড়ে। আমার মেয়ে ভাত, পানি খেয়ে যেতে পারেনি। আমার মেয়েকে জানোয়ারেরা হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে।’

প্রিয় মেয়ে রাফির শূন্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘আজ দুই বছর আমি আমার মেয়ের কণ্ঠে মা ডাকটি শুনতে পাই না। রাতে ঘুম হয় না। কারণ আমার মেয়ের হাত-পা বেঁধে যখন তারা আগুন লাগিয়েছিল, তখন আমার মেয়ে কি করেছিল? ওই দিন আমি খবর পেয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে ছুটে যাই, তখন পুলিশ সদস্যরা আমার মেয়ের কাছে ভিড়তে দেয়নি। তার পুরো শরীর ব্যান্ডেজ করে ফেলে ডাক্তাররা। পুলিশরা আমাকে বলে তার শরীরের ৮৫ ভাগ পুড়ে গেছে। বাঁচে কি-না সন্দেহ? আপনি মেয়ের আগুনে পোড়া এই শরীর দেখলে সহ্য করতে পারবেন না। ডাক্তাররা আপনাকে দূরে থাকতে বলেছে। তখন আমার মেয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল।’

নুসরাতের মা বলেন, ‘আমার মেয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আমাকে অনেক কথা বলেছে। তখন আমার মেয়েকে আমি বলেছিলাম মামলা তোলার জন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে দিতা। তাহলে আজকে তোমার এই অবস্থা হতো না। তখন আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল মা মৃত্যুকে ভয় পাই না। তারা সাদা কাগজ ধরে সিগনেচার (স্বাক্ষর) চেয়েছিল তখন আমার মেয়ে রাজি না হওয়ায় তারা হাত-পা বেঁধে কেরোসিন তেল ঢেলে আমার মেয়ের গায়ে দিয়াশলাই মেরে আগুন ধরিয়েছিল। তখন আমার মেয়ে যে চিৎকার দিয়েছিল কেউ শুনতে পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আজকে দেশে-বিদেশে করোনাভাইরাসে হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা মনেকে বুঝ দিতে পারবে, করোনাভাইরাসে তারা মারা যাচ্ছে। কিন্তু আমার মেয়েকে জানোয়ারেরা হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়ে মেরেছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ৯৯ ভাগ মানুষ আমার মেয়ের পাশে ছিল। আমাদের পরিবারের পাশে ছিল। আসামি ও তাদের স্বজনরাসহ ১ ভাগ মানুষ আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে থাকতে পারে।’

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।

আসামিরা হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, তিনি আশা করছেন নিম্ন আদালতের দেয়া রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে।

তিনি দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ ভাগ পুড়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মৃত্যুবরণ করেন নুসরাত। ১০ এপ্রিল বিকেলে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা

সকল