২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কক্সবাজারে ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত ৩ পুলিশকে আদালতে সোপর্দ

সাময়িক বরখাস্ত
গ্রেফতার এসআই নুর-ই খোদা ছিদ্দিকী - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাদা পোশাকধারী পুলিশ পরিচয়ে এক নারীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে এক এসআইসহ তিন পুলিশকে গ্রেফতার করেছে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ। সেই সাথে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে বিভাগীয় ব্যবস্থা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্তরা হলেন- উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুর-ই খোদা ছিদ্দিকী, কনস্টেবল আমিনুল মমিন ও মামুন মোল্লা। তারা তিনজনই কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত।

মঙ্গলবার দুপুরে তাদেরকে কক্সবাজার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, একজন নারী তার কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন। যেটি ফৌজদারি অপরাধ। অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টির সাথে পুলিশের ভাবমূর্তি জড়িত। আমরা কোনোভাবেই পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে দিতে পারি না।’

সোমবার বিকেলে কক্সবাজার শহরের মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী রিয়াজ আহমদের স্ত্রী রোজিনা খাতুন এই ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় এক পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়। পরে জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন করে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর আরো দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়ার রিয়াজ আহমদের স্ত্রী রোজিনা খাতুন গ্যাসের দোকান করার জন্য তার আত্মীয়-স্বজন থেকে সোমবার তিন লাখ টাকা সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরেন। বিকেল ৪টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৫/৬ জন সাদা পোশাক পরা লোক তার বসতবাড়িতে যান। পরে তাকে ইয়াবা কারবারি আখ্যা দিয়ে টাকা দাবি করেন। রোজিনা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বেধড়ক মারধর করেন ওই লোকজন।

এক পর্যায়ে রোজিনা তার কাছে থাকা তিন লাখ টাকা সাদা পোশাকধারী পুলিশের হাতে তুলে দেন। এসময় রোজিনার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে অটোরিকশা থেকে একজনকে ধরে ফেলে। পরে ৯৯৯-এ ফোন করে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।

পরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সবাইকে বিষয়টি অবগত করে তদন্তে নামে। একপর্যায়ে সোমবার রাতে এ ঘটনার সাথে জড়িত তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা নিতে সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি এ ঘটনা নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কক্সবাজার সদর থানায় অবস্থান নেন জেলা পুলিশের এসপি হাসানুজ্জামান।

সাদা পোশাকধারী পুলিশের ছিনতাইয়ের শিকার রোজিনা খাতুনের স্বামী রিয়াজ আহমেদ জানান, ‘কক্সবাজারের সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে গ্যাসের দোকান করার জন্য আমার স্ত্রী এই টাকাগুলো তার আত্মীয়-স্বজন থেকে সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরলে সিএনজি করে ৫/৬ জনের একটি দল বাসায় ঢুকে তাকে মারধর করে পিস্তল ঠেকিয়ে টাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি সদর থানা পুলিশকে জানানো হলে ঘটনাস্থলে আটককৃত একজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।’

পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান বলেন, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। গ্রেফতার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনী বিধিমতো সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement