২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উখিয়ার মানুষজন মানছে না করোনার সতর্কতা

উখিয়ার মানুষজন মানছে না করোনার সতর্কতা -

করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবে মুষড়ে পড়েছে গোটা দুনিয়া। চারদিকে শুধু হাহাকার, শুধু মৃত্যু, স্বজন হারানোর কান্না, অসুস্থতা, চাকরি হারানোর দুঃসহ বেদনা, কাজ না থাকা, অর্থনৈতিক মন্দা, পরিবারে দারিদ্রতা বেড়ে যাওয়া। এমন এক সঙ্কট তৈরি হয়েছে যা পুরো বিশ্বকে একসাথে স্থবির করে দিয়েছে।

বাংলাদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর মিছিল। এত কিছুর পরও উখিয়ার মানুষের করোনার কোনো ভয় নেই। উখিয়ার মানুষেরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলেও করোনার সচেতনতা মানছেন না বললেই চলে।

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে পুরো বিশ্বের ন্যায় উখিয়াতেও চলছে লকডাউন, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ বন্ধ, দৈনন্দিন কাজকর্মে এসেছে নির্লিপ্ততা। মানুষ ছিল ঘরবন্দী, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছিল চলাফেরা। আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন। আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কারোর সাথে দেখা সাক্ষাৎ ছিল না। স্বাভাবিক জীবনযাপনে িএস গিয়েছিল স্তবদ্ধতা।

এমন অবস্থায় অনেকেই মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলেন। অধিক মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। করোনার কারণে মানুষ বাধ্য হয়েই একে অন্যের কাছ থেকে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। যার প্রভাবে মেজাজে বার বার পরিবর্তন ঘটছে। মনটাও চুড়ান্ত পর্যায়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

এর চাপ পড়েছে মানসিক স্বাস্থ্যে, পারিবারিক অঙ্গনে, সামাজিক বন্ধনে। গত ৩১ মে থেকে সরকার গাড়ি চলাচলে অনুমতি দেয়। গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় মানুষ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা শুরু করেছে। ঘর থেকে বের হচ্ছে। আত্নীয়-স্বজনের বাড়ি যাচ্ছে। ঘরবন্দী মানুষগুলো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে।

চট্রগ্রাম থেকে এবার কোরবানির ঈদ করতে আসা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সোহেল জানান, এখন উখিয়ার মানুষের চলাফেরা দেখলে মনে হয়, করোনা যেন বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে। আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গিয়ে উখিয়ার এক ব্যাংকার মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর মনে করেছিলাম আর বাচঁব না। শতাধিক লেবু ও প্রায় এক কেজির মতো মধু খেয়েছি। কিন্তু মধুও তিতা নাকি মিঠা মুখের স্বাদ কী তা আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। প্রতিটি মুহুর্ত গেছে চরম অস্থিরতায়। যে করোনায় আক্রান্ত হয়নি সে কখনো বুঝবে না করোনা কী জিনিস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মৃত্যুভয়সহ মহামারি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাপার মাথায় ঘুরাঘুরি করতে থাকে। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, হ্নদয়স্পন্দন বেড়ে যায়। ফলে ঘুমিয়ে পড়া কঠিন হয়ে যায়। আবার রাতে ঘুম ভাঙলে এইসব দুঃচিন্তায় আর ঘুম আসে না। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়। কর্মব্যস্ততা না থাকলেও আমাদের মস্তিস্ক এখনও করোনাভাইরাসের দুঃচিন্তায় ব্যস্ত। তাই কাজে মনোযোগ দেয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। এটা মেনে নিতে হবে যে, এই সঙ্কটের সময় কাজের দক্ষতা আগের মতো থাকবে না এবং এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। যেমন ঘরের বিভিন্ন কাজে হাত দেয়া, বই পড়া, ছবি আঁকা, আল্লাহর ভয়ে নামাজ কালাম শেখা, কোরান পড়া এভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। এতে মনোযোগের সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কেটে যাবে।

বিশ্ব ব্যাপি ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে অপরিচিতি হয়ে উঠছে আমাদের চিরচেনা পৃথিবী। দূরে সরে যাচ্ছে একান্ত আপনজনেরাও। নির্মমতায় ভরে উঠছে সমাজ। তাই সকলে মহান আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে পরিপূর্ণভাবে একজন খাটি মুসলমান হয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নেয়া প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement