২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে চিংড়ি রেণু আহরণ

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চিংড়ি রেণু আহরণ - ছবি : নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চিংড়ি পোনা আহরণ করছেন একশ্রেণীর মানুষ। এতে করে ধ্বংস হচ্ছে অন্যান্য সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ। মিরসরাই উপজেলার উপকূলীয় জোন ও ফেনীর সোনাগাজী মধ্যবর্তী এলাকার সমুদ্র উপকূলীয় ফেনী নদীর বিভিন্ন স্থানে ও সাগরের মোহনায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে অবাধে চলছে গলদা-বাগদা চিংড়ির রেণু আহরণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিষিদ্ধ মশারি ও ঠেলা জাল দিয়ে জেলেরা লাখ লাখ চিংড়ি রেণু আহরণ করে বিক্রি করছে স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে। ব্যাপারীরা সেগুলো দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে খুলনা, বাগেরহাট ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে। ফেনী নদীর মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে শুরু করে সাহেরখালী, ডোমখালী, ইছাখালী, বানচন্দ খাল পর্যায়ে এবং ছোট ফেনী নদীর কাজীর হাট স্লুইচ গেট থেকে দক্ষিণে সন্দ্বীপ চ্যানেল, ফেনী নদীর মুহুরী রেগুলেটরের দু’পাশে, চর খোন্দকার, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের জেলেপাড়া, সুজাপুর, থাক খোয়াজ লামছি, ছোট স্লুইচ গেট, ভাঙ্গাবেড়ী, চর
খোয়াজের লামছিসহ বেশ কিছু স্থানে গিয়ে চিংড়ির আহরণ ও মৎস্য প্রজাতির এ ধ্বংসলীলা দেখা যায় প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত। অথচ প্রজনন মৌসুম থাকায় এ সময়টাতে নদীতে মাছ ধরার প্রতি রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। বিশাল উপকূলীয় এলাকায় প্রতিদিনই লাখ লাখ চিংড়ি পোনা আহরণ করা হচ্ছে। এতে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মীরসরাই ও সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক শত মানুষ চিংড়ি পোনা আহরণে করছে।

ফেনী নদীর মুহুরী প্রজেক্টের মিরসরাই রেগুলেটর এলাকায় খুলনা থেকে চিংড়ি পোনা আহরণ করতে আসা আকাশ ও সাগর নামের দুই জেলে জানান, চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ করতে দু’মাসের জন্য এ এলাকায় এসেছি। নদী থেকে মশারির জাল দিয়ে অন্য পোনাসহ চিংড়ির পোনাগুলো আহরণ করি। পরে চিংড়িটা রেখে অন্য জলজ প্রাণীগুলো ফেলে দিই। স্থানীয় মহাজনের মাধ্যমে নদী থেকে এ পোনা আহরণ করে প্রতি পিস ২ টাকা ধরে বিক্রি করেন। দৈনিক প্রতিজনে প্রায় ১ হাজার চিংড়ি পোনা আহরণ করেন বলেও জানান তারা।

স্থানীয়রা জানান, চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করার সময় কোরাল, কাঁকড়া, বাইলা, মলা, ডেলা, চেউয়া, তফসে, বাটা, চাপিলা, কুচিয়া, টেংরা, পোয়া, লইট্টা, ভেটকি, ইলিশ, কাচকিসহ আরো অনেক প্রজাতির পোনা আসে। তারা শুধু চিংড়ি পোনা আহরণ করে বাকিগুলো ফেলে দেন। এক সময় এ অঞ্চলে অনেক মাছ পাওয়া যেতো। এখন আর আগের মতো নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। অনেকে অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই অবাধে চলছে এ রেণু সংগ্রহ।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, চিংড়ির রেণু পোনা ধ্বংস করা অবৈধ। যদি কেউ এভাবে করে থাকেন, তাহলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। জনবল সঙ্কট থাকলেও আমরা শিগগিরই এই বিষয়ে মিরসরাই উপকূল ও মুহুরী নদীর মোহনায় অভিযান পরিচালনা করবো। তবে পোনা আহরণের অধিকাংশ অংশ ফেনী এলাকায় হওয়ায় ফেনী মৎস্যবিভাগের জরুরি পদক্ষেপ বেশি প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একটি গলদা বা বাড়দা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ করতে গিয়ে অন্য ৪৬৩ প্রজাতির মাছের রেণু পোনা ধ্বংস হয়। আর সাথে নদীর পানিতে বাস করা ক্ষুদ্র জীবকণা ধরা হয়, তাহলে তার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭৬৩টি। এটা সার্বিকভাবে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ। এটা কঠিনভাবে রোধ না করতে পারলে বাংলাদেশের নদীগুলো ধীরে ধীরে মাছ শূন্য হয়ে যাবে। আর রোধ করা গেলে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ বাড়বে দিনকে দিন।


আরো সংবাদ



premium cement