২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মানিকছড়িতে কোরবানিকে ঘিরে গরু বাজারজাতে চিন্তিত খামারীরা

গো-খামারে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরু বিক্রির উদ্যোগ
মানিকছড়ি উপজেলার একে এগ্রো ডেইরি ফার্মে মোটাতাজা করা ষাঁড় -

বৈশ্বিক মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। দীর্ঘ সময় আয়-রোজগার বঞ্চিত মানুষজনের মাঝে ঈদ-আনন্দের আমেজ নেই। ফলে আসন্ন কোরবানকে ঘিরে মানিকছড়ি উপজেলার ছোট, মাঝারি ও বড় অর্ধশত গো-খামার ও কৃষকের ঘরে মোটাতাজা করা কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি জাতের গরু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে গো-খামারীরা। ফলে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে কেজি সাড়ে ৩ শত টাকায় গরু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে গো-খামারীরা। অন্যদিকে কৃষকরা ক্রেতাশূণ্য নিয়মিত বাজারেও গরু তুলতে চিন্তিত।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও গো-খামার মালিক সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলায় ছোট-বড় গো-খামার রয়েছে ৩৯টি। এতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কোরবানী বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার গ্রামে-গঞ্জের হাজারো কৃষক নিজ গৃহে কয়েক হাজার দেশি বলদ, ষাঁড় মোটাতাজা করে রেখেছেন। ইতোমধ্যে হাট-বাজারে কৃষকের ছোট-মাঝারি গরু উঠালেও ক্রেতাশূণ্য বাজার! ফলে, খামারে মোটাতাজা করা গরু নিয়ে দুঃচিন্তাগ্রস্ত গো-খামারীরা।

করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে কোরবানির বাজার জমে উঠার সম্ভাবনা যেমন ক্ষীণ। অন্যদিকে অনুন্নত জনপদে অনলাইন বাজার প্রত্যাশাও কঠিন। ফলে, মানিকছড়ির গো-খামারীদের মোটাতাজা করা গরু বাজারজাত নিয়ে চিন্তা বাড়ছেই।

পাহাড়ে প্রাকৃতিক সবুজ ঘাসে লালিত-পালিত দেশি-বিদেশি গরু কোরবানির চাহিদা থাকায় এ গো-খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন সাধারণ কৃষক ও গো-খামারীরা। গো-খামারে এবং গ্রামের পালিত গরুর নিয়মিত খাবারের তালিকায় প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস, ভূষি, খৈল এবং খেড়। এসব খাবার সু-স্বাদু হওয়ার কারণে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজায় পরিপুষ্ট হয়। ফলে এসব গরু কোরবানীতে বেশ চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা।
বিগত সময়ে কোরবানিকে ঘিরে এখানকার হাট-বাজার, গ্রামে-গঞ্জে পাইকারদের আনা-গোনায় মুখরিত হয়ে উঠে কোরবানীর বেচা-কেনা। আর এ বছর করোনা আতঙ্কে এখনো পর্যন্ত জনপদের কোথাও কোরবানীর গরুর খোঁজে কেউই আসেনি। হাট-বাজারগুলোতে দেশি গরু বিক্রির উদ্দেশ্যে উঠানো হলেও ক্রেতাশূণ্য বাজার দেখে দুঃচিন্তায় পড়েছে গো-খামারীরা।

উপজেলার ডাইনছড়ি গরু ব্যবসায়ী আনু মিয়া বলেন, প্রতিবছর কোরবানির বাজারে দেশি গরুর চাহিদা অতুলনীয়। কোরবানির এক দেড় মাস আগ থেকেই শহরের ব্যবসায়ীরা গরুর খোঁজে বাড়ি বাড়ি আসতে শুরু করেন। যার ফলে এখানকার ঘরে ঘরে কম-বেশি দেশি বলদ, ষাঁড় দেশি পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়।

অনেকে আবার এ খাতে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গরু বর্গা দিয়ে রাখেন। একসত্যাপাড়া মো: আবুল কালাম ও আবদুল মালেক বলেন, আমরা নিজ বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে যৎসামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করে ৫-৭টি দেশীয় বলদ, ষাঁড় লালন-পালন করে কোরবানির বিক্রি করে থাকি। এ বছর করোনার ছোবলে দূর্বিসহ জনজীবনে কোরবানির আনন্দে ভাটা পড়ার আশংকা রয়েছে। এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।

উপজেলার একে এগ্রো ডেইরি ফার্মের মালিক ও উপজেলা ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি হাজি মো: ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবার উপজেলার ছোট, মাঝারি ও বড় ৩৯ খামারের পাশাপাশি কৃষকের ঘরে মোটাতাজা দেশীয় পদ্ধতিতে সু-স্বাদু খাবারে পালিত গরু বাজারজাত করা নিয়ে আমরা দুঃচিন্তায় আছি। কৃষকের ছোট ও মাঝারি গরু অনায়াসে বাজারে উঠানো গেলেও গো-খামারের ৫শ’ থেকে ৮শ’ কেজি ওজনের গরু বাজারে উঠানো খুবই কষ্টকর। যার ফলে লাইফ ওয়েট পদ্ধতিতে আমরা বড় গরুগুলো বিক্রি করে থাকি। এতে কেজি সাড়ে ৩ শত টাকা দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা ফার্মে মাঝারি ও বড় ১৫ থেকে ২০টি গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। উপজেলার গো-খামারগুলোতে প্রায় ৫ শতাধিক কোরবানির গরু বাজারজাতের অপেক্ষায় রয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. সুচয়ন চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, উপজেলার ৩৯টি তালিকাভুক্ত ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি অসংখ্য কৃষক কোরবানিকে ঘিরে সু-স্বাদু খাবার ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরুগুলোতে মোটাতাজা করছে। সময়ে অসময়ে খামারি ও কৃষকরা আমাদের (চিকিৎসক) পরামর্শ নিয়ে থাকেন।


আরো সংবাদ



premium cement