১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নবীনগরে হতদরিদ্রদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

-

অতি হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্যে সরকারের গৃহিত ৪০ দিনের কর্মসূচির লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছার বিরুদ্ধে। প্রতিকার চেয়ে ২ জুন জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ওই প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকা, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের আলাউদ্দিন, আক্তার হোসেন, রেজাউল করিম, আবুল হোসেন এবং এরশাদ মিয়াসহ পাঁচজন ভুক্তভূগী শ্রমিক।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হতদরিদ্রদের সহায়তায় সরকার টাকা দেবে বলে তাদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংক এশিয়া লি. ইব্রাহিমপুর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় ৯৪ জনের নামে হিসেব (অ্যাকাউন্ট) খোলার পর গত ৬ এপ্রিল প্রত্যেকের হিসেবে আট হাজার টাকা জমা হওয়ার ম্যাসেজ আসে তাদের মোবাইলে। পরদিন সকালে চেয়ারম্যান ও ব্যাংক কর্মচারীরা তাদের বাড়িতে গিয়ে মেশিনে তাদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে টাকা পাওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।

আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পর দিনই ওই টাকা উত্তোলন হয়েছে বলে তাদের মোবাইলে আরো একটি ম্যাসেজ আসে, কিন্তু তালিকায় নাম থাকা কেউ টাকা পাননি। অপর দিকে ওই তালিকায় চেয়ারম্যানের কয়েক জন স্বজন ও প্রবাসীদের নাম উঠে এসেছে। তারা হলেন, চেয়ারম্যানের আপন চাচাতো ভাই দুবাই প্রবাসী হাবিবুর রহমান লিটনের স্ত্রী বিউটি আক্তার, ইরাকে কর্মরত মো: দেলোয়ার হোসেন, ওমানে কর্মরত মো: আল-আমীন। কুয়েতে কর্মরত জিলানী ও ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে মহিলা মেম্বার আসমা বেগমের স্বামী ব্যবসায়ী শাহিন মিয়াসহ বিত্তশালী অনেকের নাম অর্ন্তভূক্ত রয়েছে।

প্রথম দিকে জনতা ব্যাংকের ভোলাচং শাখা থেকে কর্মসূচির হিসেব পরিচালনা করা হতো। ওই ব্যাংকের ম্যানেজার অবৈধভাবে টাকা উত্তোলনে আপত্তির কারণে চেয়ারম্যান ব্যাংকের শাখা পরিবর্তন করেন এমন অভিযোগও রয়েছে।

ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ইব্রাহিমপুর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কর্মকর্তা মারুফ হোসাইন বলেন, এতোগুলো টাকা বাড়িবাড়ি গিয়ে দেয়া সম্ভব নয়, লক ডাউন থাকা অবস্থায় অফিসে এলে ঝামেলা হয় এবং আমাদের কাছে এতো টাকা ক্যাশও থাকে না। ফিঙ্গার নিয়ে চেয়ারম্যান ও নিকটবর্তী যারা আছেন তাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়া হয়। ৯৪ জন হতদরিদ্রের জন্যে মোট ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ পেমেন্ট করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবু জামাল বলেন, ব্যাংক এশিয়া থেকে লেবারদের দেয়ার জন্য কিছু টাকা চেয়ারম্যানের হাতে দেয়ার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। তালিকায় নাম থাকা অন্য শ্রমিকদের মধ্যে ফারুক মিয়া, আবুল হাসান, খালেদা আক্তার, মো: শাহিনুর মিয়া, পারভীন বেগম ও শাহ পরানের মোবাইলে টাকা আসার ম্যাসেজ এলেও তারা টাকা পাননি বলে জানান।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আবু মোছা বলেন, ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে এ হিসাবের টাকা লেনদেন হয়, আমি টাকা তুলে নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এশিয়ান ব্যাংক আমার পরিষদের পাশে হওয়ায় যোগাযোগের সুবিধার্থে ব্যাংক স্থানান্তর হয়েছে জানিয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ সাজানো হয়েছে।

জাফরপুর গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মামুনুর রশিদ ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো: জাকারিয়া বলেন, হতদরিদ্রদের নামের তালিকা ও টাকা উত্তোলনের বিষয়ে ভূক্তভোগীরা আমাদেরকে জানিয়েছেন, তাদের আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হলেও তাদের কাউকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি। অভিযোগকারীদের বাড়িতে গত রাতে চেয়ারম্যান নিজে গিয়ে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন এমন কথাও শুনতে পাচ্ছি। বিষয়টি সঠিক তদন্তের দাবি করছি।

নবীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, এই কর্মসূচির একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পান। এ থেকে ২৫ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখা হয়। সেই হিসেবে ৪০ দিনে একজনের মোট পাওনা ৮ হাজার টাকা হলেও সঞ্চয়ের এক হাজার টাকা বাদে তারা ৭ হাজার টাকা পান। প্রত্যেক বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং এপ্রিল-মে মাসে এই কর্মসূচি হয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুম বলেন, অভিযোগের অনুলিপি আমাকে দেয়া হয়েছে শুনেছি, কিন্তু এখনো পায়নি। তবে, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement