২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ট্রেন দুর্ঘটনা : সংঘর্ষের আগে কী ঘটেছিল?

ট্রেন দুর্ঘটনা : সংঘর্ষের আগে কী ঘটেছিল? - -নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী ‘তূর্ণা নিশীথা’র  চালক ও তার সহকারীর দায়িত্বহীনতার কারণে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা থেকে আখাউড়া রেললাইনটি সিঙ্গেল হওয়ায় সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে ‘উদয়ন’ ট্রেনকে স্টেশনে অপেক্ষায় রেখে ‘ত‚র্ণা নিশীথা’কে যেতে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আরো সিদ্ধান্ত ছিল ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ স্টেশনে প্রবেশের আগপর্যন্ত মন্দবাগ স্টেশনের আউটারে থাকবে ‘তূর্ণা-নিশীথা’। তবে সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে দেয়া তিনটি সিগন্যাল অমান্য করে ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে উদয়নে আঘাত করে তূর্ণা-নিশীথা।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ে কর্মকর্তা জানান, দূর্ঘটনার সময় ‘তূর্ণা নিশীথা’কে অটো ব্রেকে রেখেই লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টার হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ত‚র্ণাকে আউটারে থাকতে তিনটি সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল মন্দবাগ রেল স্টেশন থেকে।দুইজন চালক একটি সিগন্যালও অনুসরণ করেনি। এছাড়াও বাইরে আউটার, হোম, স্টার্টারসহ বেশ কিছু কারিগরি প্রক্রিয়া আছে। এসবের কোনোটাতেই তূর্ণা নিশীথার চালকরা সারা দেয়নি। ফলে এই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। মাত্র দুই মিনিট অপেক্ষা করলেও এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটত না বলে তার দাবি।

এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে তূর্ণা নিশীথার লোকোমাস্টার তাছের উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে ও ওয়ার্কিং গার্ড আব্দুর রহমান পলাতক রয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের বরখা¯Í করা হয়েছে।’

তবে কুমিল্লা ও আখাউড়া স্টেশনের মধ্যবর্তী আউটার বা ১ম সিগন্যাল না দেখার কারণে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন তূর্ণার সহকারী লোকোমাস্টার (চালক) অপু দে। মঙ্গলবার সকালে তিনি দাবি করেন, একটি স্টেশনে বা ক্রস লাইনে ঢোকার আগে চারটি সিগন্যাল থাকে। আউটার ১ম সিগন্যাল, হোম, স্টাটারস ও ইমার্জিং সিগন্যাল। কিন্তু আমরা স্টেশনে ঢোকার আগে আউটার সিগন্যাল দেখিনি। পরে হোম সিগন্যাল দেখেছি। তবে ওই সিগন্যালটিকে আমরা মনে করেছিলাম ১ম সিগন্যাল।

‘১ম সিগন্যাল না দেখার কারণ হচ্ছে, ওই সিগন্যালের ওপর পর্যন্ত বালি জমা ছিল। ওইখানে ডাবল লাইনের কাজ চলছে। সাধারণত ১ম সিগন্যাল দেখলে স্টেশনে প্রবেশ করা যায় না। আমরা ১ম সিগন্যাল দেখিনি, তাই স্টেশনে প্রবেশ করি।’

অপু দে বলেন, দ্বিতীয় বা হোম সিগন্যাল দেখলে কোনোভাবেই স্টেশনে প্রবেশ করা যায় না। কিন্তু আমরা ওই হোম সিগন্যালকে ১ম সিগন্যাল মনে করি। যখন ব্রেক করি তখন স্টাটারস সিগন্যালে ত‚র্ণার ইঞ্জিন ঢুকে পড়ে। এরপর ইমার্জিং সিগন্যাল পার হয়ে উদয়নের কয়েকটি বগিতে আঘাত লাগে।

তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিতীয় বা হোম সিগন্যাল দেখার পর যদি ব্রেক করতো তাহলে এ সংঘর্ষের ঘটনা হতো না। তারা নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে ছিল। এখন দায় এড়াতে সিগন্যালকে দায়ী করছে।

তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি রেলপথ পরিদর্শক নিজে পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সংশিøষ্ট কর্তৃপক্ষ। আহত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন কমিটির সদস্যরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কমিটির প্রধান মিতু মরিয়ম বলেন, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) থেকেই আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক পর্যায়ে যারা রেসপন্স করেছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমাদের তদন্ত কাজ চালু আছে। এখনও পর্যন্ত আমরা চূড়ান্ত কিছুতে আসতে পারিনি। কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে সেটি আমাদের এখনো বলা হয়নি। সেটি জানার পর আমরা বলতে পারবো কবে প্রতিবেদন জমা দিবো।

এদিকে ১৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় অপমমৃত্যুও মামলা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জাকের হোসেন চৌধুরী বাদী মামলাটি করেন।

আখাউড়া রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল কান্তি দাস জানান, স্টেশন মাস্টার থানায় একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা করেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোররাত পৌনে ৩টার দিকে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন।

 


আরো সংবাদ



premium cement