২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কক্সবাজারে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি

- ছবি : সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব নিয়ে উপকূলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সংকেত বাড়তে থাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আটকা পড়েছে প্রায় ১২শ’ পর্যটক।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত রয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কক্সবাজারের উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার ট্রলার নিরাপদে উপকূলে ফিরে এসেছে।

দুর্যোগ মোকাবেলা কক্সবাজারে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৯৭টি মেডিকেল টিম ও ৬ হাজার ৪৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক। সাগর উত্তাল থাকায় শুক্রবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছে ১২শ’ পর্যটক। আটকা পড়া এসব পর্যটকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় এবং নিরাপদে থাকার বিষয়ে তদারকি করছে প্রশাসন।

গত দুই দিন ধরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বুলবুলের তীব্রতা শুরু হলে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভূমিধ্বস ও ঝুপড়ি ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় এসব কথা জানানো হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, পূর্বের অভিজ্ঞতায় বলা যায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তীব্রতা শুরু হলে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আবাসস্থলে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটতে পারে। উপড়ে যেতে পারে ঝুপড়ি গুলো। সেসব মোকাবেলায় ক্যাম্পে কাজ করা আইএনজি, এনজিও এবং জিওগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারি ভলান্টিয়ারগর নিজ নিজ ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের সবাইকে সমন্বয় করতে প্রস্তুতি নিয়ে আছে সেনাবাহিনীর বিশেষ টীম। এ বিষয়ে দুপুরে ক্যাম্প এলাকায় বৈঠকও করেছে সংশ্লিষ্টরা।

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় জেলা প্রশাসনের সকল বিভাগের কর্মকর্তা, এনজিও, আইএনজিও, শৃংখলা বাহিনীর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, সামগ্রিকভাবে জেলার উপকূল এবং আশপাশ এলাকার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সহযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেয়া রয়েছে। জেলা দুর্যোগ ফান্ডে ২ লাখ ৬৩ হাজার নগদ টাকা, ২০৬ মেট্রিক টন চাল, ৩৪৬ বান ঢেউটিন, ২৫০০ পিস কম্বল এবং ৩৭৬ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। কক্সবাজারের ৮ উপজেলার মাঝে সিংহভাগই উপকূলীয় হওয়ায় এসব মজুদ অপ্রতুল। তাই জরুরী ভিত্তিতে ১০ লাখ নগদ টাকা, ২শ’ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বহুতল ভবনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। উপকূল হিসেবে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সদরের পোকখালী, চৌফলদন্ডী, খরুশকুল, টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

সভায় জানানো হয়, সিপিসির ৬৪০০ স্বেচ্ছাসেবক ৪৩০টি ইউনিটের মাধ্যমে প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে থাকা মেগাফোন দিয়ে সংকেত বাড়ার সাথে সাথে দূর্যোগপূর্ণ এলাকায় তা প্রচার করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রস্তুত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮০০ ভলান্টিয়ারও। প্রস্তুত রাখা হয়েছে দমকল বাহিনী, পর্যাপ্ত যানবাহন, আনসার ভিডিপি ও স্থানীয় প্রশাসন।

উপজেলায় ইউএনওদের সতর্ক নজর রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ০১৭১৫-৫৬০৬৮৮ নাম্বার সচল রেখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রোম চালু করা হয়েছে। দূর্যোগ সংক্রান্ত সকল তথ্য এখানে সরবরাহ ও পাওয়া যাবে।

এদিকে, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানিয়েছেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে প্রায় ১২০০ পর্যটক আটকা পড়েছেন। বৃহস্পতিবার বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে রাত্রি যাপনের জন্য থেকে যান। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে হঠাৎ সংকেত বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান আরো জানান, দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত তাদের পরিচ্ছন্নভাবে হয়রানি মুক্ত আতিথেয়তা দিতে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা আছে। পরিষদের সবাই সর্বক্ষণ খোঁজ নিয়ে পর্যটকদের আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

চেয়ারম্যানের মতে, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল কয়েকটি হোটেল রয়েছে। কঠিন দুর্যোগ বা জলোচ্ছাস হলেও আটকে পড়া পর্যটকদের বিচলিত হবার কিছু নেই। সংকেত বাড়লে আমরা তাদের এসব উচু ভবনে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করব।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক জানিয়েছেন, সাগর থেকে মাছ ধরার ট্রলার নিরাপদে ফিরে এসেছে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. এম.এ মতিন জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর শনিবার ও রোববার ছুটি বাতিল করে কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কন্ট্রোল রুমে মেডিকেল টিম গঠন, জরুরী ওষুধ পত্র, পরিবহন ও অন্যান্য সরঞ্জাম মজুদ রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে কক্সবাজারের থেকে থেকে গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কক্সবাজারের উপকূলীয় নাজিরারটেক, পেকুয়ার মগনামা, কুতুবদিয়ার ভাঙ্গা বেড়িবাধ এলাকা, মহেশখালীর নিচু এলাকা, সদরের পোকখালীসহ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।

কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজারের নিচু এলাকা প্লাবিত হবে। সংকেত ক্রমে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় কক্সবাজারে ৯৭টি মেডিকেল টিম ও ৬ হাজার ৪৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সতর্ক অবস্থায় রাখতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেন্টমার্টিনে আটকা পড়া পর্যটকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় এবং নিরাপদে থাকার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। সাগরের অবস্থা স্বাভাবিক হলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২ কাউখালীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু চুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান অব্যাহত, ঘাতক বাসচালক গ্রেফতার তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মহিষের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ আহত ৪ গফরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে সরকার : মির্জা ফখরুল মিরসরাইয়ে মৃত্যুর ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার কবর থেকে লাশ উত্তোলন

সকল